তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশ
ইন্টারনেট সেবার উন্নয়নে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। সরকার আশা করছে, ফাইভ জি বা পঞ্চম প্রজন্মের প্রযুক্তির যুগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিতে মাইলফলক হবে এই ক্যাবল। আসছে এপ্রিলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এই সম্মিলিত উদ্যোগে (কনসোর্টিয়াম) যুক্ত হতে চুক্তি করবে সরকার। ফলে আগামী ২০২৩ সালের জুন থেকে সাবমেরিনের মূল ক্যাবলের সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। এতে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেটের চাহিদা মিটবে।
বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড-বিএসসিসিএল সূত্র জানায়, নতুন সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য গঠিত সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কার মধ্যবর্তী স্থানে সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামে যুক্ত হবে এই ক্যাবল। কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে সিঙ্গাপুরের দিকে ও কক্সবাজার হতে ফ্রান্সের দিকে ৫ টেরাবাইট করে মোট ১০ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট পাবে বাংলাদেশ। এতে যুক্ত হতে কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশন হতে গভীর সমুদ্রের মূল লাইনের দূরত্ব হবে ১ হাজার ৮৫০ কিলোমিটার। এ সংযোগের জন্য খরচ হবে ৬৯০ কোটি টাকা। যার ৮৯ শতাংশ খরচ হবে শুধু ক্যাবল বাবদ। আগামী ১৭ জানুয়ারি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এপ্রিলে কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে মূল চুক্তি করবে বাংলাদেশ। এ জন্য গত সেপ্টেম্বরে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়।
এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা এখন ফাইভ জি প্রযুক্তির যুগে আছি। কিন্তু এখনো নিম্নমানের ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করছি। এই বাস্তবতায় প্রযুক্তির উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মাইল ফলক হয়ে আসবে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল। আসছে এপ্রিলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এই কনসোর্টিয়ামে যুক্ত হওয়ার চূড়ান্ত চুক্তি হবে। ফলে ২০২৩ সালে তৃতীয় সাবমেরিনের মূল ক্যাবলে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। এই সংযুক্তির ফলে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত আমাদের ব্যান্ডউইথ চাহিদা মিটবে। মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করেছে। তার সঙ্গে নতুন সাবমেরিন ক্যাবল দীর্ঘমেয়াদি চাহিদা মেটাবে। সূত্র জানায়, সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামে সিঙ্গাপুর-ফ্রান্স সংযোগের ক্যাবল দূরত্ব ২০ হাজার কিলোমিটার। এই ক্যাবলটিতে বাংলাদেশ ছাড়াও ১৬টি দেশ সংযুক্ত হবে। এরমধ্যে চীন থেকেই যুক্ত হবে ৩টি কোম্পানি। ল্যান্ডিং স্টেশন থাকবে ২০টি। গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর এই কনসোর্টিয়ামে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুর-ফ্রান্স পর্যন্ত সি-মি-উই ৬ এর যে মূল রুট হবে সেটি বাংলাদেশ হতে ১৮৫০ কিলোমিটার দূর দিয়ে যাবে। এই দূরত্বই হচ্ছে বাংলাদেশের নিজেদের রুট। আর নিজেদের রুটের ক্যাবল বসানোর পুরো খরচ বহন করবে বাংলাদেশ। সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামের সদস্যরা যৌথভাবে শুধু মূল লাইনের খরচ বহন করবে যেটি সিঙ্গাপুর-ফ্রান্স বসছে। মূলত, বঙ্গোপসাগরের নিচে সিঙ্গাপুর-শ্রীলঙ্কার মধ্যবর্তী কোনো একটি স্থানে বাংলাদেশের নিজেদের ব্রাঞ্চ স্থাপন করা হবে। আর এ কাজটি করবে কনসোর্টিয়ামের কাজ পাওয়া কোম্পানি। সিঙ্গাপুরে কনসোর্টিয়ামের দরপত্র মূল্যায়ন ও চূড়ান্তকরণ কার্যক্রম যে কোম্পানি সি-মি-উই ৬ এর কাজ পাবে, তারা প্রি-লে সার্ভে করার পরই এটি চূড়ান্ত হবে। সূত্র জানায়, ব্র্যাঞ্চিং ইউনিট হতে ক্যাবল এসে কক্সবাজারের ল্যান্ডিং স্টেশনে সংযোগ হবে। এই স্টেশন সি-মি-উই ৪ হলো, দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের স্টেশন। এটি এক্সটেনশন করে সি-মি-উই ৬’র জন্য ব্যবহার করা হবে। সি-মি-উই হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম ইউরোপের সংক্ষিপ্ত নাম। এই এলাকার মধ্য দিয়ে ক্যাবলটি স্থাপিত বলে প্রতিটি ক্যাবলের নামে এমনটা যুক্ত থাকে। সর্বশেষ সি-মি-উই ৫ কনসোর্টিয়ামে এই এলাকার দেশগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, ইউএই, জিবুতি, মিসর, তুরস্ক, ইতালি, ফ্রান্স, মিয়ানমার, ইয়েমেন। এই ১৯ দেশ ১৯টি ল্যান্ডিং পয়েন্টের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে।
এখন দেশে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার এক হাজার জিবিপিএস ছুঁয়েছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরের শেষে দেশে মোট কার্যকর ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে নয় কোটি ১৮ লাখ। যার মধ্যে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংযোগ আছে আট কোটি ৬২ লাখ।
সংখ্যায় মাত্র ৫৭ লাখ ৩৫ হাজার হলেও ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমেই ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের বেশিরভাগ ব্যবহার হয়ে থাকে। এর বাইরে ওয়াইম্যাক্স সংযোগ আছে আরও ৬১ হাজার। টেকশহর।