চট্টগ্রামকে হারিয়ে রাজশাহী বিপিএলের ফাইনালে
গেইল ঝড়ের দেখা মিললও ফাইনালে যাওয়া হলো না
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) কিছুটা দেরিতে যোগ দিলেও এরইমধ্যে চার ম্যাচে ব্যাট হাতে নেমেছেন ক্রিস গেইল। কিন্তু প্রথম তিন ম্যাচেই (২৩, ২৩ ও ৩৮) তার ব্যাটে ঝড়ের দেখা পাওয়া যায়নি। অবশেষে রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে তার ব্যাটে তাণ্ডবের দেখা মিলল। ওপেনিংয়ে নেমে ব্যাটে ঝড় তুললেন ক্রিস গেইল। কিন্তু ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব ফেরার পরই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ইনিংস। ভালো অবস্থান থেকে হঠাৎই কোণঠাসা হয়ে পড়ে দলটি।চট্টগ্রাম, ৯ উইকেটে তুলেছে ১৬৪ রান।
১৫ জানুয়ারি বুধবার মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৪ রান সংগ্রহ করেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
টসে জিতে ফিল্ডিং বেছে নেওয়া রাজশাহী রয়্যালস অবশ্য চট্টগ্রামের ওপেনার জিয়াউর রহমান (৬) ও ইমরুল কায়েসকে (৫) দ্রুতই বিদায় করে দিয়েছিল। কিন্তু অপর প্রান্তে এদিন আসল রূপে দেখা দিলেন গেইল। আর সবাই জানে, ক্যারিবীয় দানবের ব্যাটে ঝড় মানে কী!
‘ইউনিভার্স বস’ ৬০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দিয়েছেন। ২৪ বল স্থায়ী ইনিংসটি ৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় সাজানো। শুধু গেইল একাই নন, ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। চট্টগ্রামের অধিনায়ক ১৮ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় করেছেন ৩৩ রান। তবে আসলে গুনারান্তে (৩১) ছাড়া বলার রান আসেনি আর কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে।
বল হাতে রাজশাহীর মোহাম্মদ ইরফান ছিলেন দুর্দান্ত। এই পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচে নিয়েছেন ২ উইকেট। তার স্বদেশী মোহাম্মদ নওয়াজ ৪ ওভারে ২ উইকেট তুলে নিতে খরচ করেছেন মাত্র ১৪ রান। এছাড়া ১টি করে উইকেট গেছে আন্দ্রে রাসেল, আফিফ হোসেন ও অলক কাপালির দখলে।
গতিময় এক ঝড়েই ধুলিস্যাৎ হয়ে গেলো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলকে ২ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে খুলনার সঙ্গী হলো রাজশাহী রয়্যালস।
১৬৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বোলার রুবেল হোসেনের তোপের মুখে পড়ে রাজশাহী রয়্যালস। দ্বিতীয় ওভারেই আফিফ হোসেন ধ্রুবর উইকেট তুলে নেন রুবেল। ৪ বলে মাত্র ২ রান করে আউট হয়ে যান ধ্রুব। লিটন দাসের দুর্ভাগ্য। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এসেই রান আউটের শিকার হলেন তিনি। তার আগে ৬ বলে করলেন মাত্র ৬ রান।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বলে রায়াদ এমরিতের হাতে ক্যাচ দিয়ে অলক কাপালি ফিরে গেলে রাজশাহী আরও বিপদে পড়ে যায়। ৩৪ রানে ৩ উইকেট পড়ার পরই জুটি বাধেন ইরফান শুকুর এবং শোয়েব মালিক। দলীয় ৮০ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ১৪ রানে আউট হন শোয়েব মালিক। যদিও তিনি খেলেন ২২ বল।
৪২ বলে ৪৫ রান করে আউট হন ইরফান শুকুর। তবে দারুণ জুটি গড়ে রাজশাহীকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে যান তিনি। শোয়েব মালিক আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেল। এরই মধ্যে মোহাম্মদ নেওয়াজ ১৪ রান করে আউট হন এমরিতের বলে।
ফরহাদ রেজা ৩ বলে ৬ রান করে আউট হলে রাজশাহীর সাময়িক বিপদ বাড়ে। কামরুল ইসলাম রাব্বি মাঠে নেমে কোনো রান না করেই যখন ফিরে গেলেন, তখন বিপদটা আরও ঘণিভূত হয়। শেষ মুহূর্তে আন্দ্রে রাসেলের ঝড়ই শেষ করে দিলো চট্টগ্রামের সব আশা আকাঙ্খা। ১৮তম ওভারের শেষ বলে ছক্কা মেরে তার ঝড় শুরু। এরপর ১৯তম ওভারে মেহেদী হাসান রানাকে পিটিয়ে তিনি এবং আবু জায়েদ রাহী মিলে তোলেন ২৩ রান। এর মধ্যে ১৭ রান নেন রাসেল। আবু জায়েদ রাহী মারেন একটি বাউন্ডারি এবং একটি সিঙ্গেল। সঙ্গে একটি ওয়াইড।
শেষ ১২ বলে প্রয়োজন ছিল ৩১ রানের। কিন্তু এক ওভারেই রাসেল আর রাহী মিলে তুলে নেন ২৩ রান। বাকি থাকলো ৬ বলে ৮ রান। শেষ ওভার করার জন্য চট্টগ্রামের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বল তুলে দেন শ্রীলঙ্কান অ্যাসেলা গুনারত্নের হাতে। প্রথম দুই বলই তিনি দিলেন ডট বল। কিন্তু তৃতীয় বল দিলেন ওয়াইড। যার পলে ৪ বলে রাজশাহীর প্রয়োজন হয় ৭ রান। তৃতীয় বলে আন্দ্রে রাসেল মারলেন বিশাল ছক্কা। একই সঙ্গে বোলার দিলেন নো বল। এক বল থেকেই এসে গেলো সাত রান। এই এক ছক্কাতেই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে হারিয়ে ফাইনালে চলে গেলো রাজশাহী।