বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি সোনালি সময়ের অভিনেত্রী শাবানা।

0
1113

আফরোজা সুলতানা রত্না, মঞ্চ নাম শাবানা হিসাবেই অধিক জনপ্রিয়; জন্ম: ১৫ জুন ১৯৫২, চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। একজন বাংলাদেশী কিংবদন্তী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। ১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে তার চলচ্চিত্রে আবির্ভাব ঘটে। পরে ১৯৬৭ সালে চকোরী চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক নাদিমের বিপরীতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। শাবানার পারিবারিক নাম আফরোজা সুলতানা রত্মা।

চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী শাবানা মাত্র আট বছর বয়সে এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ ছবিতে শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। এরপর একে এক অসংখ্য হিট ছবি উপহার দিয়েছেন গুণী এই অভিনেত্রী। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে অভিনয় থেকে দূরে আছেন শাবানা। স্বামী সন্তান নিয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। তবে মাঝে-মধ্যে দেশে আসেন বেড়াতে।প্রায় ২৩ বছর চলচ্চিত্র থেকে দূরে আছেন।

তিনি এখন পুরোপুরি পরিবারিক মানুষ। পরিবার নিয়েই সময় কাটে। নাতি নাতনিতের নিয়ে খেলা করে, আড্ডা দিয়েই সময় পার করেন। মাঝে মাঝে দেশে আসন। আত্মীয়-স্বজন, সিনেমার পুরোনো মানুষজনদের সঙ্গে দেখা করেন। সম্প্রতি কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে এসেছেন । দেশে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন স্বামী চিত্রপ্রযোজক ওয়াহিদ সাদিক।  কথা বলেছেন অভিনয় ও অতীত জীবন নিয়ে।

কথা বলার সময় পোশাকের প্রসঙ্গ টেনে শাবানা বলেন, ‘আমি পোশাকের ব্যাপারে খুব সচেতন ছিলাম। একবার “বধূ বিদায়” ছবিতে পরিচালক প্রথমে আমাকে গল্পটা শোনালেন। এরপর গ্রামের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য বললেন। পরিচালক জানান, এটা এমন একটি চরিত্র গ্রামের মেয়ে খালি গাঁয়ে শুধু একটা শাড়ি পরে অভিনয় করতে হবে। তখন আমি তাকে না করে দিয়েছিলাম। তখন পরিচালক আমায় শহরের মেয়ের চরিত্র দিয়েছিলেন।’

অভিনয় প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমি সব সময় গল্প ও চরিত্র নিয়ে ভাবতাম। কোথাও শুটিংয়ে গেলে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতাম। পরিচালক ও নায়ক নিয়ে অতটা ভাবতাম না। আমি চাইতাম ছবিতে আমার চরিত্রটা যেন ভালো হোক।’ শুটিংয়ের বিভিন্ন ঘটনা ছবির মতো একের পর এক চোখের মধ্যে ভাসতে থাকে। কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। কয়েকদিন আগে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘ভাত দে’ ছবিটা টেলিভিশনে দেখাচ্ছিল। অনেক কথাই মনে করে দেয়।

বাংলা চলচ্চিত্রে সোনালি সময়ের কথা প্রসংঙ্গে বলেন তখন  বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আসলেই সোনালী সময় ছিল। এফডিসির কোনো ফ্লোর ফাঁকা থাকত না। ববিতা, কবরীসহ বেশ কয়েকজন তখন জনপ্রিয়। সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক ছিল। তবে দেখা হতো কম । প্রত্যেকেই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় দেখা করার ফুরসত হতো না। তবে সম্পর্কের অবনতি হয়নি কারো মধ্যে। সবার মাঝে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা ছিল। নিজেদের অবস্থান থেকে ভালো কাজ উপহার দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি বলেন বিপরীতে কে আছেন সেটা বিষয় ছিল না। চরিত্রের প্রয়োজনেই চারদিকের মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতাম। চাইতাম আমার অভিনয় সবচেয়ে ভালো হোক। বাংলা চলচ্চিত্রে সোনালি সময়ের অভিনেত্রী শাবানা। তিন যুগের অভিনয় ক্যারিয়ারে শাবানা অভিনয় করেছেন প্রায় ২৯৯টি ছবিতে। নাদিম, রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, জসীম, সোহেল রানার সঙ্গে জুটি বেঁধে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় ছবি।

শাবানা অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর তালিকায় আছে- ‘চকোরী’, ‘ভাত দে’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘ওরা এগারো জন’, ‘বিরোধ’, ‘আনাড়ি’, ‘সমাধান’, ‘জীবনসাথী’, ‘মাটির ঘর’, ‘লুটেরা’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কেউ কারো নয়’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘দুঃসাহস’, ‘পুত্রবধূ’, ‘আক্রোশ’ ও ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ ইত্যাদি।

অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে শাবানা পেয়েছেন ১০বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। একবার পেয়েছেন প্রযোজক হিসেবে। ২০১৭ সালে দেওয়া হয় আজীবন সম্মাননা। ১৯৯৭ সালে অজানা কারণে চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নেন গুণী এই অভিনেত্রী।

তিনি বলেন ‘একজন শাবানার কোনো অপূর্ণতা নেই। সবই পেয়েছি। অভিনয় করে দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছি। এখনও অনেক ভালোবাসা পাচ্ছি। সিনেমার সোনালি দিনের সাক্ষী। পরিবার পরিজন  নিয়ে সুখেই আছি। আমি চলে গেলে  মানুষ আমাকে হয়তো মনে রাখবেন এমন কিছু কাজ করেছি। কোনো অপূর্ণতা নেই আমার জীবনে।