পঙ্গপালের আক্রমনে বিপর্যস্ত আফ্রিকার দেশগুলো৷ সেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘের এফএও৷ পঙ্গপালের দল এমনকি পৌছে গেছে পাকিস্তান ও ভারতেও ৷ ২০০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টি হয়, নিকট প্রাচ্য ও দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার এমন দেশগুলোতে এই পতঙ্গদের দেখা যায়৷ জাতিসংঘের এফএও এর তথ্য অনুযায়ী এক কোটি ৬০ লাখ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল এই অঞ্চলের ত্রিশটি দেশে এদের অস্তিত্ব রয়েছে ৷
পঙ্গপালের জীবনকাল মাত্র তিনমাস ৷ জন্মের ৬ সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ণ বয়স্ক হয়ে ওঠে৷ এক মাসের মধ্যেই ডিম পাড়তে সক্ষম ৷ দুই সপ্তাহর মধ্যেই এদের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়৷ তিনমাসের মধ্যেই মরু পতঙ্গরা তাদের জনসংখ্যা ২০ গুণ বৃদ্ধি করে ফেলতে সক্ষম৷ ছয় মাসের মধ্যে যা ৪০০ গুণ আর নয় মাসের মধ্যে আট হাজার গুণ বেড়ে যেতে পারে৷ প্রয়োজনীয় বৃষ্টি আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেই চলে৷দৈনিক প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে পারে মরু পতঙ্গরা ৷ আর এভাবেই চলে যায় এক দেশে আরেক দেশে ৷ মরু পতঙ্গদের সাধারণত শুষ্ক অঞ্চলে দেখা যায়৷ আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য আর দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে এদের বসবাস ৷ এসব অঞ্চলে বছরে বৃষ্টিপাত হয় আট ইঞ্চিরও কম ৷
২৫ বছরে মধ্যে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা: পঙ্গপালের আক্রমনে বিপর্যস্ত এখন ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, কেনিয়া হয়ে এরা ছড়িয়ে পড়েছে আফ্রিকার ১৪টি দেশে ৷ এরা ঝাকে ঝাক উড়ে ৷ কেনিয়ায় একটি পঙ্গপাল দৈর্ঘ্যে ৩৭ মাইল আর প্রস্থে ২৫ মাইলের আকার নিয়েছে৷ যেখানে যাচ্ছে সেখানে রীতিমত সূর্যের আলো তারা ঢেকে ফেলতে পারে ৷ সব মিলিয়ে ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে পড়েছে কেনিয়া ৷ উত্তর আফ্রিকা থেকে পৌছে গেছে উগান্ডা এবং দক্ষিণ সুদানে ৷ গত ২৫ বছরের মধ্যে সেখানে এতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি৷ এফএও বলছে ফেব্রুয়ারি ২০২০ নাগাদ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে৷ খাদ্য সঙ্কট ও মানবিক বিপর্যয়ের হুমকিতে রয়েছে আফ্রিকার এক কোটির বেশি মানুষ৷ এফএও পাঁচটি দেশ ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, কেনিয়া, জিবুতি, ইরিত্রিয়া জন্য সাত কোটি ৬০ লাখ ডলার তহবিলের আহবান জানিয়েছে ৷
এরইমধ্যে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে কয়েক হাজার একর জমিতে হানা দিয়েছে পঙ্গপাল ৷ লোহিত সাগরের দুইপাড়েও সমান তালে বাড়ছে এদের আধিপত্য ৷ এফএও বলছে আক্রান্ত দেশগুলোর পাশাপাশি পতঙ্গ ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন প্রতিবেশি দেশগুলোর উপরও নজর রাখছে সংস্থাটি ৷ তার মধ্যে এমনকি ওমান, সৌদি আরব, সুদান, ইয়েমেনও রয়েছে ৷ এই পতঙ্গদের উপদ্রব শুরু হয়েছে ইরানেও ৷ ইতিমধ্যে পঙ্গপাল ঝড় পৌছে গেছে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ৷ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেখানের চাষ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন৷ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একটি বিবৃতিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন ৷ ৪০০ কোটি টাকার একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে পাকিস্তান সরকার ৷ প্রায় দুই দশক পর পাকিস্তান এমন একটি বিপর্যয়ে পড়েছে ৷ গত বছরের শেষ দিকে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী মরু অঞ্চলগুলোতে এর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে ৷ ভারতের পাঞ্জাবেও ঢুকে পড়েছে পতঙ্গরা ৷ ভারতর গুজরাটের ১৭ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৷ তিন লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিও এই পতঙ্গদের শিকার হয় ৷ জাতিসংঘের আশংকা এদের ঠেকাতে না পারলে জুন নাগাদ তাদের জনসংখ্যা ৫০০ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে ৷
পঙ্গপালে আক্রমনে খাদ্য সঙ্কটের আশংকা: এই মরু পতঙ্গ প্রতিদিন তাদের নিজেদের ওজনের সমপরিমান খাবার খেতে পারে ৷ পঙ্গপালের আক্রমনে মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যেতে পারে ফসলি জমি ৷ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক বিশেষজ্ঞের মতে, ম্যানহাটনের আকৃতির পঙ্গপালের একটি ঝড় গোটা নিউ ইয়র্কের জনসংখ্যার প্রয়োজনীয় খাবার সাবাড় করতে পারে ৷ প্রতি কিলোমিটারে ঝাঁকে চার থেকে আট কোটি পতঙ্গ থাকে ৷ পতঙ্গদের এক কিলোমিটার বিস্তৃত একটি পাল একদিনে ৩৫ হাজার মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্য শেষ করতে সক্ষম ৷ আফ্রিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্য আর পশ্চিম এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে মরু পতঙ্গরা ৷ সব মিলিয়ে ৩০টি দেশে এই পঙ্গপাল ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছে জাতিসংঘ ৷ যার কারণে দেখা দিতে পারে ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কট ৷
পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণের সহজ কোন উপায় নেই ৷ উড়োজাহাজে, গাড়িতে করে কিংবা বহনযোগ্য যন্ত্রের সাহায্যে কীটনাশক ছিটিয়ে সাধারণত এদের দমন করা হয় ৷ তবে সমস্যা হচ্ছে এতে উপকারী কীট পতঙ্গও মারা পড়ে ৷ কীটনাশক ছাড়া বিকল্প উপায়ে পঙ্গপালের বংশবিস্তার কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে ৷