শামীমা নূর পাপিয়া কাণ্ডের পর রাজধানীর পাঁচতারা ওয়েস্টিন হোটেলের কাছে তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (০২ মার্চ) দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পরিচালক) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য চিঠিটি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাঠানো চিঠিতে পাপিয়ার নিয়মিত হোটেলে থাকা ও খাওয়ার বিলের কপি, বিভিন্ন সময় হোটেল বুকিংয়ের নথিপত্র ও কার নামে রুম বুকিং দেয়া হত, সে সব নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে ৮ মার্চের মধ্যে সংশ্লিষ্ট তথ্য দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, হোটেলে ডেরা বানিয়ে পাপিয়া নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন। যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলার সাধারণ সম্পাদক পাপিয়ার ওয়েস্টিন-সম্পৃক্ততার পেছনে প্রভাবশালী অনেকের মদদের কথাও জানা গেছে।
ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট মাসের পর মাস ভাড়া রেখে পাপিয়ার বানানো সেই ডেরায় কারা কারা যেতেন, সে বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশও হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চাইছে।
‘দি ওয়েস্টিন ঢাকা’ ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের একটি হোটেল, যে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন ব্যবসায়ী নূর আলী।
ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসছে, পাপিয়ার কারবারের বিষয়ে তারা কিছুই জানতেন না।
পাপিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসায় ওয়েস্টিনের মার্কেটিং কমিউনিকেশন বিভাগের সহকারী পরিচালক সাদমান সালাহউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, পাপিয়া আমাদের স্যুইট ভাড়া নিয়েছিলেন। এটা বিশাল আকারের তো, উনার গেস্টরা সেখানে ছিলেন। তিনি কাদেরকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করেছেন কিংবা কতজন ছিলেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাবলিকলি প্রকাশ করা হোটেলের নিয়ম পরিপন্থি।
ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেনশিয়াল সুইট, যার প্রতিরাতের ভাড়া ২ হাজার ডলারের মতো, ভাড়া করে পাপিয়া যৌনবাণিজ্য চালাতেন বলে র্যাবের দাবি। গত ২২ ফেব্রুয়ারি তাকে গ্রেফতার করা হয় হয়।
পাপিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে তার তথ্য বিবরণ থেকে জানা যায়, মোট ৫১ দিন ওই কক্ষে ছিলেন তিনি। আর এজন্য বিল মিটিয়েছেন ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৭ টাকা। আর এই হোটেলে এই সময়ের জন্য অবস্থানকালে বার ব্যবহারের জন্য ব্যয় করেছেন এক কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিদিন হোটেল বেয়ারাদের টিপস দিতেন ৮/১০ হাজার টাকা।
র্যাব জানিয়েছে, হোটেলের বিল পাপিয়া নগদে পরিশোধ করতেন।
র্যাব জানায়, পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী যৌন বাণিজ্য ছাড়াও ‘অস্ত্র ও মাদকের কারবার, চাঁদাবাজি, চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণাসহ বিভিন্নভাবে মানুষের অর্থ আত্মসাত করে’ বিপুল সম্পদ গড়েছেন।
গ্রেফতারের পর যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত পাপিয়ার সম্পদের অনুসন্ধানে রোববার সংস্থার উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজকে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় দুদক।
অনুসন্ধান কর্মকর্তা শাহীন আরা মমতাজ হোটেল ওয়েস্টিন ছাড়াও রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ডোম-ইনোকে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করতে চিঠি দিয়েছেন।
ডোম-ইনোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে রাজধানীর ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার ফ্ল্যাটের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ চিঠিতে ইন্দিরা রোডের পাপিয়ার যাতায়াত করা ফ্ল্যাটটি ভাড়া নাকি পাপিয়ার অথবা তার স্বামীর নামে কেনা, সে সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পাপিয়ার সম্পদ, এসবের উৎস, বিদেশে অর্থ পাচার সবই অনুসন্ধানের আওতায় আছে। পাপিয়ার আশেপাশে যারা ছিল, তাদের দিকেও গোয়েন্দা নজর রাখা হচ্ছে। তার সহযোগীরাও আইনের আওতায় আসবে।