দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা এবং অনলাইন ক্লাস

0
886

এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আছমা উলফাৎ  বাসায় বসে অনলাই ক্লাস করছেI ছবি:পূবকোণ

একদেশ আরেকদেশের সাথে যুদ্ধ চলাকালিন সময়ও শিক্ষপ্রিতিষ্ঠান চালু থাকে । এবারই এর ব্যতিক্রম, এক অদৃশ্য শত্রুর সাথে যুদ্ধে সকল শিক্ষপ্রিতিষ্ঠান বন্ধ । শুধু বাংলাদেশে নয় , সারা পৃথিবী ব্যাপি ।

করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বন্ধ। শিক্ষর্থীরা নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করছে। দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা কিভাবে হবে বিষয়টা নিয়ে সংশ্লিষ্ঠ সকলের মধ্যে দুশ্চিন্তা ছিল।অনেক অভিভাবক এই দীর্ঘ বন্ধের জন্য অনেকটা উদ্বিগ্ন তাঁদের সন্তানদের পড়ালেখা নিয়ে। তাঁরা ভাবছেন দীর্ঘদিন বদ্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত ক্লাস না পাওয়ায় অনেকে খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাসে ব্যত্যয় হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের দৈনিক পাঠভ্যাসে ব্যাঘাত ঘটছে। অপরদিকে দেশের স্বার্থে, সকলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নেওয়া প্রতিষ্ঠান বন্ধের পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন ছিল যথাউপযুক্ত। তবে এ সময়ে শিক্ষার্থীরা যাতে লেখাপড়ায় পিছিয়ে না পড়ে, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় বিশেষত মাধ্যমিক শাখার আসন্ন অর্ধবার্ষিক বা প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি না পড়ে, তার জন্য সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংসদ টিভি প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাসের ব্যবস্থা নিয়েছে । বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একটি রুটিনও দেয়া হয়েছে। ভার্চুয়াল ক্লাস সরকারের একটি মহতি উদ্যোগ বলে মনে করেন দেশের শিক্ষার্থী, শিক্ষক অভিবাবকগণ, তাঁরা এ স্কুল স্তরে অনলাইনে শিক্ষা পোগ্রামকে স্বাগত জানিয়েছেন।

অনলাইনে শিক্ষা বিষয়টা অনেকদিন ধরেই হয়ে আসছে৷করোনা মহামারির কারনে বাংলাদেশেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এই ব্যবস্থা চালু করেছে । কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থা থাকলেও তেমনভাবে যোরালো কার্যক্রম ছিলনা । এবার বাধ্য হয়ে অনেকেই তাতে যোগ দিল ।করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ হওয়ার কারনে, কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে বাসা থেকে যাতে শিক্ষার্থীরা হোম ওয়ার্ক করতে পারে ও অনলাইনে এ সময়ের লেখাপড়া সম্পন্ন করতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ালেখায় যাতে কোন ব্যাঘাত না ঘটে সেই জন্য এই বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য ইতোমধ্যে একাধিক শিক্ষপ্রিতিষ্ঠান প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে।করোনা পরিস্থিতি উন্নতি না হলে এই ছুটি হয়তো আরও দীর্ঘ হতে পারে। এ সময় শিক্ষার্থীরা বাসায় থাকতে থাকতে অনেকটা একঘেয়েমি হয়ে যাবে। কিভাবে ডিজিটাল কনটেন্টে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করা যায় সেটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।মন্জুরী কমিশন অনলাইনে শিক্ষাকার্য্যক্রম চারানোর জন্য উৎসাহ দিলেও, তবে কোনরকম মূল্যায়ন করতে নিষেধ করেছে ।অর্থাৎ কোন পরিক্ষা নেয়া যাবে না । ভর্তিও করা যাবে না ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নসরুল কদির অনলাইনে ক্লাস নিয়ে খুবই উৎসাহিত ।এই প্রথমবারের মত তিনি জুম সফ্টওয়ারের মাধ্যমে ক্লাসটি করালেন । প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৬জন উপস্থতি ছিল ।তাঁর মতে  শিক্ষার্থীরা খুবই সাচ্ছন্দ্য বোধ করছে, ক্লাসনিতে কারও কোন সমস্যা হয়নি । তিনি বলেন ‘ক্লাস নেওয়ার আগে সামাজিক যোগাযেগ-ইমেইলের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সে মোতাবেক সবাই উপস্থিত ছিল । এই প্রযুক্তি ব্যবহার প্রথম হওয়ার কারনে সামান্য হলেও দুশ্চিন্তা কিছু ছিল । কিন্তু কিছুক্ষনপরই সব কেটে উঠতে সক্ষম হয়েছি’ ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ড. মনজুরুল কাদেরের স্নাতকোত্তর ক্লাসে ২০ জনের মধ্যে ১৭ জনই উপস্থিত ছিল ।সকলেই উৎসাহের সাথে ক্লাস করেছে ।কোন সমস্যা হয়নি বলে যানা যায়।

সার্দান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কাজী নাজমুল হুদা জানালেন, তিনি অনলাইনে চারটি ক্লাস নিচ্ছেন । প্রায় ষাট ভাগ শিক্ষার্থি প্রতিটি ক্লাসে উপস্থিত খাকে । তিনি জানান, কোন রকম সমস্যা ছাড়াই তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন ।

সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণীকার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই ক্লাস শিক্ষার্থিদের জন্য খুবই উপকারী ছিল বলে জানা যায় । সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতেগনা কিছু শিক্ষকের নিজের চেষ্টায় এধরনের ক্লাস চালু আছে। তবে ইংরেজী মিড়িয়াম স্কুল, বেসরকারী বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা শ্রেণীকার্যক্রম আগে থেকেই চালু আছে । তারমধ্যে সার্দান ইউনির্ভাসিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনির্ভাসিটি অন্যতম ।১৮ র্মাচ থেকে থমকে যাওয়া শ্রেণীকার্য্যক্রম শুরু থেকেই চালু আছে ।তবে ছুটি র্দীঘায়িত হওয়ার কারনে অন্য বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও এব্যপারে উদ্দোগ নিতে যাচ্ছে ।

করোনা ভাইরাসের কারনে জনজীবনে স্থবিরতা আসলেও জ্ঞান আহরনে বা বিতরনে স্থবিরতা আনা যাবে না । অনেকের মতে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পরিবার, প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন, জাতিকে আরও সুসংগঠিত করবে । অজানাকে জানার আগ্রহ বাড়িয়ে দিবে এবং মানুষ ধর্ম অনুরাগী হবে । প্রতিটি মানুষের মৃত্যু অবধারিত, তারপরও মানূষ আশানিয়েই বেচেঁ থাকে । থেমে নেই মানুষের কর্মপরিকল্পনা । স্বেচ্ছায় বন্দি অবস্থায় অনলাইনেই পারে শিক্ষার বাতায়ন খোলা রাখতে । অনলাইন কার্যক্রমের কারনে যারা তথ্যপ্রযুক্তিতে অভ্যস্ত নন এখনই সময় , ইমেইল, ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ ইমেজ এবং পাওয়ার পয়েন্ট , ওর্য়াড, এক্সেল , সামাজিক যোগাযোগের সাইট, ইত্যাদি চর্চা করলে বা শিখে নিলে একবিংশ শতকে চলার সময়, কথা বলার সময় নিজেকে অসহায় মনে হবে না ।বরং আধুনিকই মনে হবে ।

তবে নজর দিতে হবে এ ক্লাসের সুবিধা যেন সব শিক্ষার্থী সমানভাবে ভোগ করতে পারে । কারণ দেশের সব এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থীর বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই, নেই সবার ঘরে টেলিভিশন , কম্পিউটার বা ইন্টাননেট  । তাই তথ্যপ্রযুক্তির এ মহতি উদ্যোগের সুফল যেন সবাই পেতে পারে , শিক্ষার্থীরা যাতে ভার্চুয়াল ক্লাসের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করতে পারেন তার প্রতিও নজর দিতে হবে ।