করোনাভাইরাস: দেশে ‘ভার্চুয়াল কোর্ট’ গঠন করার উদ্যোগ

0
596

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আপাতত সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতিদের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রোববার ২৬ এপ্রিল প্রথমবারের ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ফুলকোর্ট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের ৮৮ জন বিচারপতি।

সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান এক বার্তায় জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট রুলস সংশোধন করে ভার্চুয়াল আদালত স্থাপনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ”ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।” করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে মার্চ মাসের শেষ থেকেই বাংলাদেশের উচ্চ ও নিম্ন আদালত পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এই বন্ধের সময় পাঁচই মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

”সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মস, ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে আদালত পরিচালনার বিষয়ে বিচারক, আইনজীবীগণের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

সশরীরে উপস্থিত না থেকে, ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থেকেও ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে বিচার পরিচালনা করাই হচ্ছে ভার্চুয়াল কোর্ট। বাংলাদেশে বিষয়টি নতুন হলেও, পার্শ্ববর্তী ভারত ও পাকিস্তানে এর মধ্যেই এ ধরণের আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরণের আদালত চালু আছে।”সম্প্রতি ভারতে করোনাভাইরাসের টেস্ট করতে টাকা না নেয়ার যে আদেশ দেয়া হয়েছে, সেটাও হয়েছে এরকম ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে।”

ফুল কোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে রাষ্ট্রপতির কাছে অর্ডিন্যান্স জারি করার সুপারিশ করা হবে। কারণ বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় এই পদ্ধতি একেবারেই নতুন করে সংযুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের রুলসও সংশোধন করতে হবে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রুলস কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অর্ডিন্যান্সেই ভার্চুয়াল কোর্টে কীভাবে শুনানি হবে, কে কে থাকবে, প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির বিস্তারিত থাকবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের পাশাপাশি নিম্ন আদালতও এই অনলাইন বিচার ব্যবস্থার আওতায় আসবে বলে জানানো হয়েছে।

করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারি আদেশের সঙ্গে মিল রেখে আদালত অঙ্গনও বন্ধ রয়েছে। কেবল জরুরি প্রয়োজনে প্রত্যেক জেলায় একটি করে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট খোলা। এ অবস্থায় সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি আমিন উদ্দিন ও সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল স্বল্প পরিসরে কোর্ট চালু করতে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেন।

এরমধ্যে আবার সুপ্রিমকোর্টের ১৪ জন আইনজীবী সীমিত পরিসরে এক/দু’টি বেঞ্চ কিংবা অনলাইনে কোর্ট খোলার জন্য প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন। করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ চেয়ে একটি বেঞ্চ গঠনে অপর দুই আইনজীবীও চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বারের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও প্রধান বিচারপতি বরাবরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আংশিক জজকোর্ট খোলার আবেদন করেন।

এরপর গত ২৩ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কঠোর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অতীব জরুরি বিষয়গুলো শুনানির নিমিত্তে ছুটিকালীন সময়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে বসবেন। তাছাড়া ছুটিকালীন হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সব অধিক ক্ষেত্রের অতি জরুরি বিষয়গুলো শুনানির নিমিত্তে হাইকোর্ট বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

অপর বিজ্ঞপ্তিতে সপ্তাহে দু’দিন জজ কোর্টও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এ দুই বিজ্ঞপ্তি জারির পর আইনজীবীরা কোর্ট চালু না করতে আবেদন জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্ট চালুর সিদ্ধান্ত ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি সপ্তাহে দু’দিন জজকোর্ট খোলার বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতাও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।