সন্দ্বীপ হারিয়ে যাওয়া অতীত

0
904

অপার সম্ভাবনার এক দ্বীপের নাম সন্দ্বীপ । বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রাচীন এই দ্বীপ চট্টগ্রামের উপজেলাতেই, জানা যায় প্রায় তিন হাজার বৎসরের পুরাতন । হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য মন্ডিত সুপ্রাচীন জনপদ সন্দ্বীপ । এ দ্বীপের প্রচুর সংখ্যক মানুষ ইউরোপ,আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় থাকে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রেরণ করে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন ।

সাম্প্রতিককালে সন্দ্বীপে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও হয়েছে চোখে পড়ার মতো। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সাগরের তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ পাচ্ছে সন্দ্বীপবাসী। চট্টগ্রামের এতকাছের সাগরবেষ্টিত এই দ্বীপ উপজেলাটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। ব্লক দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ চলচ্ছে। প্রধান সড়ক দেলোয়ার খাঁ প্রশস্তকরণের কাজও চলমান। সন্দ্বীপের প্রায় প্রতিটি রাস্তা এখন পাকা হয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ  যোগাযোগ ব্যাবস্থা এখন দ্বীপটিতে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো।  জেটি নির্মাণকাজ চলছে । সন্দ্বীপকে অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন উদ্বোধনের অপেক্ষায়।

এতো সব উন্নয়ন বাধার মূখে নিরাপদ যাতায়াত না থাকা । সব কিছু ছাপিয়ে বিশদ সম্ভাবনার এ জনপদের প্রধান অন্তরায় যাতায়াত ব্যবস্থা। প্রতিদিন সন্দ্বীপ-গুপ্তছড়া-চট্টগ্রামের কুমিরা ঘাট দিয়ে প্রায় ৫ হাজার মানুষ কাদা-মাটি মাড়িয়ে যাতায়াত করে। সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাট থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছতে ১৫ কিলোমিটার সাগর পাড়ি দিতে হয় অনিরাপদ নৌযানে।প্রতিনিয়ত সন্দ্বীপের বাসিন্দাদের উপেক্ষা করতে হয় চরম বিপদজনকভাবে ।শুধু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মূল ভূখণ্ড থেকে চারদিকে জলরাশি বেষ্টিত এ দ্বীপের যাতায়াত ব্যবস্থার কাছে মানুষ যেন অসহায়। বারবার নৌ-দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি ঘটে; তবুও গড়ে উঠেনি নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা।সরকারে সব উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে অনিরাপদ নৌ-যাতায়াতের কারণে।’২০১৭ সালের ২ এপ্রিল ১৮ জনের সলিল সমাধি আজও কাঁদায় সন্দ্বীপবাসীকে। শুধু তাই নয়, সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে প্রয়াত সাংসদ মুস্তাফিজুর রহমানের মা, বোনও মৃত্যুবরণ করেছেন।

ক্রমাগত নদী ভাঙনের কারণে ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী সন্দ্বীপের আয়তন ৪৮৮.৫২ বর্গ কিলোমিটার বা দ্বীপটি ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫-১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত,একটি ক্ষুদ্র দ্বীপে পরিণত হয়েছে। জনসংখ্যা ২,৭৮,৬০৫ জন । তবে বিভিন্ন বেসরকারি অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বর্তমানে এই দ্বীপের মোট জনসংখ্যা প্রায় চার লাখ।

সন্দ্বীপের চেয়েও ছোট দেশের সংখ্যা পৃথিবীতে কম নয় । সঠিক পরিকল্পনার না থাকায় দুর্বল ব্যবস্থাপনায় সয়লাব। যার কারনে সঠিক ভাবে নগরায়ন যেমনি হয়নি তেমনি মনুষের দুর্ভোগও কমেনি । অথচ একটা সময়ে সন্দ্বীপের সাথে চট্টগ্রামের হেলিকোপটার সার্ভিস চালু ছিল। সন্দ্বীপের নামে একটি বিমান বন্দরের কোড নাম্বার এমনিতেই বরাদ্ধ আছে। শুধু প্রয়োজন  সরকারের সিদ্ধান্ত আর বাস্তবায়ন। তবে বিমানবন্দর হলে সন্দ্বীপে স্থানীয় মানুষের যাতায়াতের পাশাপাশি দেশের পর্যটন শিল্পও এগিয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে । সন্দ্বীপের মানুষ লাভবান হবে, তেমনি সরকারও লাভবান হবে বিপুল আয়ের মাধ্যম। তাছাড়া এখানে বিমানবন্দর হলে এখানে বিমানবাহিনীর এয়ারবেজ তৈরি করার মাধ্যমে দেশের সমুদ্র ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও আরও শক্তিশালী করতে পারবে।

সন্দ্বীপের লবণ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ কারখানা এবং বস্ত্র শিল্প পৃথিবী খ্যাত ছিল। উপমহাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভ্রমণকারীরা এই অঞ্চলে এসে তাদের জাহাজ নোঙ্গর করতেন ও সহজ বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং পরিবহন সুবিধাদি থাকায় এই অঞ্চলে ব্যবসা ও বসতি স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করতেন। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিলে হতে পারে আধুনিক পর্যটন শিল্প নগরী আর সন্দ্বীপ ফিরে পেতে পারে তার অতীত ।