যেভাবে আক্রমণ করে করোনা ভাইরাস

0
541
করোনা ভাইরাস মানুষের ফুসফুস, শ্বাসনালী থেকে শুরু করে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে, এমন প্রমাণ আগেই পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ যার মধ্যে এমনকি হৃদযন্ত্র, স্নায়ু, কিডনি এবং ত্বকও আছে৷
এখানেই শেষ নয়৷ ব্রিটিশ স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় মস্তিস্কেরও বড় ধরনের ক্ষতি হয়৷ যেসব রোগীর মৃদু লক্ষণ থাকে বা যারা সেরে ওঠেন, তাদের ক্ষেত্রেও সমস্যাটি রয়ে যায়৷ সেটি অনেক ক্ষেত্রে দেরিতে ধরা পড়ে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধরাই পড়ে না৷ এই গবেষণাটি ‘ব্রেইন’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে৷ ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা এজন্য ব্রিটেনের ৪০ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন৷
গবেষণায় দেখা গেছে, ১২ জনই কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রদাহে ভুগেছেন৷ ১০ জন মস্তিস্কের ট্রানসিয়েন্ট এনসেফেলোপাথি রোগে, আটজনের স্ট্রোক এবং আরো আটজন পেরিফেরাল স্নায়ু সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন, যা পক্ষাঘাত এবং পাঁচভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ হয়৷
 হৃৎপিণ্ড: বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে করোনা ভাইরাসের কারণে হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ থাকা ব্যক্তিদের কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হার অনেক বেশি৷ কিন্তু যাদের হৃদরোগ নেই তারাও আক্রান্তের পর হৃৎপিণ্ডের পেশির কোষ মারা যায়৷ তবে ভাইরাসের আক্রমণে কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাকি ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের তৈরি রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
ফুসফুস: কোভিড-১৯ এ ফুসফুস সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ফুসফুস জটিলতাতেই বেশির ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ যারা সুস্থ হয়ে উঠেন তাদের ফুসফুসও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কারণ, সুস্থদের ফুসফুসে ঘোলাটে সাদা মেঘের মত বস্তু দেখতে পেয়েছেন চীনের গবেষকরা৷ যেটা ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়৷
শ্বাসকষ্ট: ফুসফুসের এই অবস্থা হলে রক্তে অক্সিজেন পৌঁছাতে বাধা পাবে৷ ফুসফুস আড়ষ্ট হয়ে পড়বে এবং  শ্বাসপ্রশ্বাস ছোট ও দ্রুত গতির হবে৷ ফলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট এবং শুকনো কফ দেখা দেবে৷ ফুসফুসের কোষ একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা আর ঠিক হয় না৷
স্নায়ুতন্ত্র: কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৮০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাদের স্বাদ এবং ঘ্রাণ শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে৷ সংক্রমণের একেবারে শুরুর দিকেই এ উপসর্গ দেখা দেয়৷ সাধারণ ফ্লুর ক্ষেত্রে যেটা রোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে হয়৷ ঘ্রাণ শক্তি বা অলফ্যাক্টরি নার্ভ অনুনাসিক ঝিল্লি থেকে খুলির হাড়ের মাধ্যমে সরাসরি মস্তিষ্কে পৌঁছায়৷
ধমনি: জুরিখের একদল প্যাথলোজিস্ট করোনায় মারা যাওয়া কয়েকজনের ময়নাতদন্ত করে দেখেছেন কারো কারো রক্তনালি এবং লাসিকা গ্রন্থি ফুলে গিয়ে সেগুলোতে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ যার ফলে হৃৎপিণ্ড, কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এক সঙ্গে বিকল হয়ে মানুষ মারা যায়৷
মস্তিষ্ক: আক্রান্তদের মস্তিস্ক আর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে কোভিড-১৯, যা রোগীদের সাইকোসিস, পক্ষাঘাত এবং স্ট্রোকের কারণ হতে পারে৷ অনেক ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো ধরা পড়ে শেষ পর্যায়ে৷ মার্স এবং সার্স ভাইরাসের সময়ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা গেছে৷ নতুন করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও আক্রান্ত অনেকের খিচুনি এবং মৃগীরোগের চিকিৎসা দিতে হয়েছে৷ এ কারণেই হয়তো আক্রান্ত অনেকের মধ্যে কোনো পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়৷ তবে করোনা ভাইরাসের কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ার বিষয়ে এখনো পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি৷
কিডনি: কোভিড-১৯ আক্রান্ত অনেকের শরীরে মারাত্মক নিউমোনিয়ার লক্ষণ থাকে এবং ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়৷ ফুসফুসে জমা তরল বের করতে ওই রোগীদের যে ওষুধ দেওয়া হয় তাতে তাদের পুরো শরীর থেকে তরল বের হয়ে যায়৷ ফলে কিডনিতে রক্ত সরবরাহ কমে যায় এবং কিডনি ঠিকমত কাজ করতে না পেরে অকেজো হয়ে পড়ে৷
রক্তপিণ্ড: কোভিড-১৯ এ গুরুতর আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে অনেক সময় রক্ত জমাট বেধে রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায়৷ এটার কারণেও অনেক সময় কিডনিতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে এ অঙ্গটি অকেজো হয়ে পড়ে৷
ত্বক: করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের ত্বকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ অনেক দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ত্বকে ক্ষত বা র‌্যাশ সৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে৷ রক্ত জমাট বাধার কারণে ত্বকের নিচে এ ধরনের র‌্যাশ দেখা যায়৷