মধ্যপ্রাচ্যে ধর্ম

0
493

কয়েকটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের মনে ধর্মের বিষয়ে চিন্তায় পরিবর্তন আসছে৷ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে ধর্মভিত্তিক নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা স্থানীয়দের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ কয়েকটি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও এসব প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ তবে বেশ কয়েকটি সমীক্ষার তথ্য বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে কিছু ক্ষেত্রে আগের চেয়ে কমছে ধর্মের গুরুত্ব৷

মানুষ কতটা ধার্মিক, তার সাথে যুক্ত ধর্মের প্রতি রাষ্ট্রের মনোভাবও৷ অধ্যাপক জেমস ডরসের মতে, এই চারিত্রিক ভিন্নতা বোঝা যাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে সৌদি আরবের তুলনা করলে৷ একদিকে, আমিরাতে মদ্যপান নিষিদ্ধ নয়৷ অবিবাহিত নারী-পুরুষ একসাথে থাকতে পারেন সেখানে৷ অন্যদিকে, সৌদি আরবে নাস্তিকতা যেন এক ধরনের সন্ত্রাসী আচরণ হিসাবে পরিচিত৷ তাঁর মত, কোন দেশের নাগরিক কতটা ধার্মিক, তা নির্ধারণ করে রাষ্ট্রের মনোভাব৷

লেবানন: ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ‘দ্য আরব ব্যারোমিটার’ জানাচ্ছে যে, লেবাননে গত দশ বছরে ব্যক্তিগত স্তরে ধর্মীয় আচার মানার হার কমেছে ৪৩ শতাংশ৷ আরো জানাচ্ছে যে, সেদেশের জনসংখ্যার মাত্র এক-চতুর্থাংশ নিজেদের ‘ধার্মিক’ বলে দাবি করে৷ যদিও লেবাননে সরকারিভাবে কোনো নাগরিক ধর্মহীন হতে পারেন না, তবে ব্যক্তিগত পরিসরে ধর্মচর্চা কমছে- এমন ধারণা দিচ্ছে আরব ব্যারোমিটারের সমীক্ষা৷

ইরান : সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইরানে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষই শিয়াপন্থি৷ অথচ সমীক্ষা বলছে অন্য কথা ৷ গ্রুপ ফর অ্যানালাইজিং অ্যান্ড মেসারিং অ্যাটিটিউডস ইন ইরান, গামান-এর একটি সমীক্ষায় ৪০ হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷ ফলাফল বলছে, ৪৭% অংশগ্রহণকারীরা জানান যে তারা এক সময় ধার্মিক ছিলেন, তবে বর্তমানে এখন আর ধর্মীয় আচার পালন করেন না ৷ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৮% শতাংশ অবশ্য ঈশ্বরে বিশ্বাসী পরিচয় দিলেও, মাত্র ৩২ শতাংশ নিজেদের শিয়া পরিচয় দেন ৷ ৫ শতাংশ জানান যে, তারা সুন্নি মুসলিম ৷ ৭ শতাংশ আধ্যাত্মিক ও ৬ শতাংশ অ্যাগনস্টিক বা অজ্ঞেয়বাদী ৷ ২২ শতাংশ কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের সাথে একাত্মবোধ করেন না এবং ৯ শতাংশ নাস্তিক৷

রিলিজিয়াস স্টাডিজের অধ্যাপক পুয়ান তামিমি আরাব মনে করেন, এই পরিবর্তনের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করছে শিক্ষা ও নগরায়ন৷ পাশাপাশি, গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা প্রথাগত পরিবারের ধারণাকেও বদলেছে, ফলে পারিবারিক স্তরে যা যা আগে করা হতো, এখন তা বদলেছে৷ এক্ষেত্রে ইন্টারনেটও একটি বড় ‘ফ্যাক্টর’ বলে মনে করেন ৷

১০০টি দেশে ধর্মচর্চা বিষয়ে নানা সমীক্ষার ভিত্তিতে সমাজতাত্ত্বিক রনাল্ড ইংলেহার্টের মত, দ্রুত গতিতে সেকুলারিজমের দিকে হাঁটা কোনো একটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের বাস্তবতা নয় ৷ একই সুরে তামিমি আরাবের মত, ‘‘এই যারা কিছুতেই নেই, মানে কোনো নির্দিষ্ট বিশ্বাসের সাথে একাত্মবোধ করেন না, তাদের সংখ্যা মরক্কো, ইরাক ও তিউনিশিয়ার মতো দেশে বাড়ছে৷’’