টোকিও অলিম্পিকস: ‘অলিম্পিক লরেল’ পেলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
একমাত্র বাংলাদেশি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে টোকিও অলিম্পিক গেমসে ‘অলিম্পিক লরেল’ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের মাত্র দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এই সম্মাননা পেলেন তিনি।
২৩ জুলাই ২০২১ জাপানের রাজধানী টোকিওতে অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁকে এই পদকে ভূষিত করা হয়। তিনি ঢাকা থেকে ভার্চ্যুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।অলিম্পিক এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) পক্ষ থেকে পুরস্কারটি প্রদান করে। করোনা মহামারির কারণে ড. ইউনূস সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গেমসে অংশগ্রহণকারী অ্যাথলেটদের প্রতি শুভকামনা জানিয়েছেন। কিপ কেইনোর পর ড. ইউনূস হচ্ছেন ‘অলিম্পিক লরেল’ সম্মাননা পাওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি।
গত ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) এক বিবৃতিতে জানায়, ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে বিশেষ অবদান রেখে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছেন ড. ইউনূস। এবার ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য অলিম্পিকে ৮১ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদকে এই বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে।
ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অলিম্পিক লরেল ট্রফি হাতে নিয়ে ছবি পোস্ট করেছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘অলিম্পিক লরেল পেয়ে আমি সত্যি সম্মানিত এবং অভিভূত। তবে অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে থাকতে না পেরে কষ্ট হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) খেলাধুলার সামাজিক দিকটিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। আপনারা ক্রীড়াবিদেরা বিশ্বকে বদলে দিতে নেতৃত্ব দিতে পারেন। বিশ্বের তিনটি বিষয় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কাজ করতে পারেন আপনারা। কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারেন; দারিদ্র্যের অবসান ঘটাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত করা শূন্যে নামিয়ে আনতে পারেন, সবার মধ্যে উদ্যোক্তার শক্তি ছড়িয়ে দিয়ে বেকারত্বের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। খেলাধুলার মাধ্যমে আরও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে অলিম্পিকের মিশনের সাফল্য কামনা করছি আমি। সবার জন্য শুভকামনা। এই পদকের জন্য আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এটি আমার কাছে বিশেষ কিছু। সবাইকে ধন্যবাদ।’
‘অলিম্পিক লরেল’ পদক মূলত শিক্ষা, সংস্কৃতি, উন্নয়ন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান যারা রাখেন তাদেরকেই প্রদান করা হয় । সেই লক্ষ্যে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো ‘অলিম্পিক লরেল’ পদক দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়। সেবার রিও অলিম্পিকে এই সম্মানজনক পদক দেওয়া হয় কেনিয়ার সাবেক অলিম্পিয়ান কিপ কেইনোকে। তিনি ১৯৬৮ এবং ১৯৭২ সালে ১৫০০ মিটারে স্বর্ণপদক জেতেন। এছাড়া তিনি ছিলেন কেনিয়ার অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট এবং আইওসির সান্মানিক সদস্য। তিনি নিজের দেশে শিশুদের জন্য স্কুলের পাশাপাশি একটি অ্যাথলেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও গড়ে তুলেছেন।
এ ব্যাপারে অলিম্পিক প্রেসিডেন্ট থমাস বাখ বলেন, “প্রফেসর ইউনূস আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা। ” তিনি আরও বলেন, প্রফেসর ইউনূস তাঁর সামাজিক ব্যবসায়ের ধারণাকে ক্রীড়া জগতে উন্নয়নের জন্য কাজ করার জন্য এই সম্মান পাবেন।
১৯৮০ সালে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন ড. ইউনূস। এরপর ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান তিনি। প্রফেসর ইউনূসের বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে ‘ইউনূস স্পোর্টস হাব’। এর মাধ্যমে একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার মাধ্যমে উন্নতির পথকে আরও সহজের চেষ্টা করে।
২০১৬ সালে ব্রাজিলে রিও অলিম্পিকে মশাল বহন করেন ড. ইউনূস। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এমন বিরল সম্মান অর্জন করেন।