নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়ান রুবল আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী

0
123

নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়ান রুবল আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী

দখিনা: ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলো মিলে  নানা ধরণের অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল রাশিয়ার উপর ।এর ফলে রুবলের মান বেশ দ্রুত নিচের দিকে পড়তে থাকে। পরিস্থিতি এমন  সংকট সামাল দিতে টানা দুই সপ্তাহ মস্কোর শেয়ার বাজার বন্ধ রাখা হয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিল রাশিয়ার মুদ্রা রুবল দ্রুত মূল্যহীন হয়ে যাবে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে মান বেড়েছে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের। মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে রুবল আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে রুবল যে অবস্থায় ছিল, এখন তার চেয়েও শক্তিশালী হয়েছে।তা অনেকের কাছেই বিস্ময়কর বলে মনে হয়ে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবসা ও অর্থনীতি বিষয়ক বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ বলছে, রুবল গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে।

ইউরোপ আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার অর্থনীতি ধসে পড়বে বলে যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। রুবল ঘুরে দাঁড়ানোর মূল কারণ হচ্ছে, রাশিয়ার গ্যাস ও তেল রফতানি।

রাশিয়ার কাছ থেকে ইউরোপের দেশগুলো যে গ্যাস ও তেল ক্রয় করে তার মূল্য পরিশোধ করা হতো ইউরোতে। রাশিয়ার সঙ্গে এটাই ছিল তাদের চুক্তি। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মস্কো জানিয়েছে যে, তাদের কাছ থেকে যারা তেল গ্যাস ক্রয় করবে সেই মূল্য পরিশোধ করতে হবে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের মাধ্যমে। এর ফলে ইউরোকে রুবলে পরিবর্তন করা হয়।

এছাড়া, দেশের বাজারে বিদেশী মুদ্রার  প্রবেশের পাশাপাশি আমদানিও নিয়ন্ত্রণে রেখেছে রাশিয়া। এ জন্যেই রুবল আরও শক্তিশালী হয়েছে।  রাশিয়ার কেন্দ্রিয় ব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ডলারের বিপরীতে রুবল শক্তিশালী হয়েছে ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ। ইউরোর বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ। রুবলকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলো থেকে একের পর এক বিস্ময় দেখা যাচ্ছে।

এ কারণেই রাশিয়ার মুদ্রা রুবল শক্তিশালী হয়েছে। তাছাড়া চীন এবং ভারতের কাছে জ্বালানী বিক্রির মাধ্যমে রাশিয়ায় বৈদেশিক মুদ্রাও আসছে। রাশিয়ার রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে ৬০ শতাংশই হচ্ছে গ্যাস এবং তেল।

রাশিয়া আর পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে সঙ্ঘাত যত তীব্র হবে, ডলার আর ইউরো তত বিষাক্ত হয়ে উঠবে।  জুলাই মাসে একটা প্রায় ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে, ডলার আর ইউরোর মূল্য সমান হয়েছে, এরপর ইউরোর মান ডলারেরও নিচে নেমে গেছে।

আর্থিক বিশ্লেষকদের মতে রুবলের মূল মেরুদন্ড হলো উদ্বৃত্ত বাণিজ্য। এটা যতক্ষণ ঠিক থাকবে, ততক্ষণ রুবল বড় কোন সমস্যায় পড়বে না। রুবল যদি এভাবে শক্তিশালী হতেই থাকে, তাহলে রুশ সরকারকে হয়তো বাজেট ব্যায় কমাতে হবে। জাতীয় মুদ্রা শক্তিশালী হয়ে উঠলে উৎপাদন শিল্পে প্রতিযোগিতা কমে যাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে তখন রাশিয়ার পণ্য ও সেবা ব্যায়বহুল হয়ে উঠবে, এবং সে কারণে তার চাহিদাও কমে যাবে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী বছরে মুদ্রার রেট কেমন হতে পারে, সেটা অনুমান করা অসম্ভব হয়ে গেছে।

সাধারণ রাশিয়ানরা বিদেশী মুদ্রা না কিনলেও বিনিময় হারের হ্রাস বৃদ্ধি কৌতুহলী হয়ে দেখছে। তারা ভাবছে, রুবল এরপর কোথায় যাবে। শুধু তাই নয়, ডলার আর ইউরো রুবলের ব্যাপারে কি ধরণের আচরণ করবে, সেই কৌতুহলও তাদের রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অনুমান করে বলা যায় কিন্তু কেউই নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন না, মুদ্রার অবস্থান আগামীতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। একমাত্র সময়ই সেটা বলতে পারবে।