আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
বেশকিছু পদ ফাঁকা রেখে কমিটি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯
বৃহস্পতিবার খালি থাকা ৩৯টি পদের মধ্যে ৩২টির বিপরীতে মনোনীত নেতাদের নাম দলীয় সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ নিয়ে দুই দফায় ৮১ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটির ৭৪ জনের নাম ঘোষণা করা হলো। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নতুন মুখ ১৪ জন। তবে এখন পর্যন্ত স্থান হয়নি মন্ত্রিসভার ৯ সদস্যের। এ ছাড়া গতকাল ৫ নারীকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ৩৩ শতাংশ নারীনেত্রী রাখার বাধ্যবাধকতা পূরণ করল দলটি।
এর আগে ২১ ডিসেম্বর দলের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে ৪২টি পদে নেতার নাম ঘোষণা করা হয়। এর পর দলের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে বাকি পদে নেতা নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে। তালিকা চূড়ান্ত হলে গতকাল ধানম–িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ৩২টি পদে নেতার নাম ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিম–লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল প্রমুখ।
এখন পর্যন্ত একটি সাংগঠনিক সম্পাদক, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক, ধর্ম সম্পাদক, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও ৩টি সদস্য পদ খালি রয়েছে। বর্তমান মন্ত্রিসভার ৯ সদস্যের নাম এখন পর্যন্ত এই কমিটিতে আসেনি। তারা গত কমিটির সম্পাদকম–লী ও সদস্য পদে ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাদের ঠাঁই হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আইন সম্পাদক ছিলেন গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুননেছা ইন্দিরা, কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমদু হুমায়ুন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান।
নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে সব রাজনৈতিক সংগঠনে নারীর সংখ্যা ৩৩ শতাংশ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আওয়ামী লীগ আরও ৫ নারীকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে এনেছে। গত কমিটিতে দলটির নেতৃত্বে ২৩ শতাংশ নারী ছিলেন। এবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৩৫ শতাংশ নারী এসেছেন।
গত কমিটিতে জাতীয় নেতা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি ও শহীদ এইচএম কামারুজ্জামানের ছেলে খায়রুজ্জামান লিটনের নাম ছিল। বর্তমান কমিটিতে এখন পর্যন্ত তারা জায়গা পাননি।
আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন স্থান হয়েছে ১৪ জনের। দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত ৩২ সদস্যের মধ্যে রয়েছেন–সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন (গত কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক) ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। প্রথমবারের মতো দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসা নাদেল চৌধুরী সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক।
উপ–প্রচার সম্পাদক পদে ফের এসেছেন আমিনুল ইসলাম আমিন। উপ–দপ্তর সম্পাদক পদে প্রথমবারের মতো ঠাঁই হয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খানের। দলের অর্থ সম্পাদক হয়েছেন ওয়াশিকা আয়েশা খান। তিনি চট্টগ্রামের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে। তিনিও প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এসেছেন। শ্রম সম্পাদক পদে ফের এসেছেন শ্রমিক নেতা হাবিবুর রহমান সিরাজ। তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে এসেছেন ছাত্রলীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ। তিনিও এবারই প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটিতে এলেন। দলের একাদশ জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতেও ছিলেন তিনি।
২৮টি কেন্দ্রীয় সদস্য পদের মধ্যে ২৫ পদে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ফের এসেছেন আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দীন আহমদ কামরান, দীপঙ্কর তালুকদার, আমিরুল আলম, রাজশাহীর আক্তার জাহান, নরসিংদীর রিয়াজুল কবির কাওছার, সিরাজগঞ্জের মেরিনা জাহান কবিতা, পারভিন জামান কল্পনা, আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, গোলাম রব্বানী চিনু, মারুফা আক্তার পপি, রেমন্ড আরেং।
প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় সদস্য পদে এসেছেন ৮ জন।
গত দুই কমিটি আগে কেন্দ্রে ছিলেন খ ম জাহাঙ্গীর। তিনি এবার সদস্য পদে এসেছেন। অন্যরা হলেন–বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাক্তার মুশফিক, রংপুরের হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, লালমনিরহাটের সফুরা খাতুন, ঢাকা থেকে সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম, সাবেক ছাত্রনেতা আনিসুর রহমান, শাহাবুদ্দিন ফরাজী ও বর্তমান সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা। তিনি বাংলাদেশের প্রথম খ্রিস্টান নারী সাংসদ।
২১ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ঘোষিত তালিকার মধ্যে নতুন ছিলেন সভাপতিম–লীর সদস্য পদে আসা সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে আসা সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে জানানো হয়, আগামী ৩ জানুয়ারি শুক্রবার আওয়ামী লীগ নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির ওপরই আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের কর্মসূচি সফলভাবে শেষ করার ভার থাকছে।