ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরেকটি টার্মিনাল ।

0
443

ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরেকটি টার্মিনাল

দখিনা রির্পোট: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিন নম্বর টার্মিনাল নামে নতুন আরেকটি টার্মিনাল যোগ হচ্ছে। অত্যাধুনিক টার্মিনাল তৈরি হতে চার বছর লাগবে, সরকার ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা আশা করছে এরপই  আমূল বদলে যাবে ঢাকার এই বিমানবন্দরের যাত্রীসেবার মান

বেশ কয়েক বছর ধরেই সরকার পদ্মা নদীর কাছে আনকোরা একটি নতুন বিমান বন্দর তৈরির কথা বলছে। তাহলে শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণের এই প্রকল্প কেন?

প্রায় এক দশক আগেই আওয়ামী লীগ সরকারের একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ নামে একটি নতুন বিমানবন্দর করার। এর জন্য জায়গাও খোঁজা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। প্রায় নয় বছর আগে মুন্সিগঞ্জের আড়িয়াল বিল এলাকায় এই নতুন বিমানবন্দর করার জন ২৫,০০০ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে ২০১১ সালে স্থানীয় লোকেরা বিক্ষোভ করার সময় সংঘর্ষে একজন পুলিশ নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছিল। পরে বিভিন্ন সময় এ বিমানবন্দরের জন্য সম্ভাব্য স্থান হিসেবে ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ঢাকার নিকটবর্তী দোহার, এবং মাদারীপুরের নাম শোনা যায়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের সমস্যার জন্য কাজ এগোয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার ২৮ ডিসেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরের তিন নম্বর টার্মিনালের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন। তাই অনেকের প্রশ্ন, এ সম্প্রসারণ প্রকল্প কি এই ইঙ্গিত করে যে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আপাতত হচ্ছে না?

কর্মকর্তারা এবং মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরের প্রকল্প বাতিল হয়নি, বরং তা বাস্তবায়নের জন্য এখনো বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ চলছে। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের অবকাঠামো যে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট নয় – তা অনেক দিন ধরেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও বিভিন্ন দেশ প্রশ্ন তুলেছে।

নতুন টার্মিনাল হলে যাত্রীদের চাপ অনেকটা সামলানো যাবে এবং ঢাকার বিমানবন্দরটি এক সত্যিকারের আন্তর্জাতিক রূপ পাবে। এতদিন বিমানবন্দরটিতে পরিকল্পিত ভাবে টার্মিনাল গড়ে ওঠেনি। প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু কিছু করে সম্প্রসারণ বা নানা রকম সংযোজন করা হয়েছে, ফলে অন্য আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মিনালের সাথে এর কোন মিল পাওয়া যায় না।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন । “নতুন টার্মিনালটি হবে পুরোপুরি আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে – যা বর্তমান বিশ্বে অন্যান্য বিমানবন্দরে দেখা যায় ”

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর যাত্রা শুরু করে ১৯৮০ সালে। এখানে আছে দুটি টার্মিনাল। বর্তমানের টার্মিনাল দুটি দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের সুযোগসুবিধা দেয়া যাচ্ছে না – যা নতুন টার্মিনালে দেয়া সম্ভব হবে। “নতুন টার্মিনালে সবকিছুই হবে অটোমেটিক এবং মেকানাইজড, ম্যানুয়াল কাজ কম হবে। বর্তমান টার্মিনালে বহির্গমন এবং আগমন টার্মিনালের যাত্রীরা মিক্স আপ হয়ে যায়, নতুন টার্মিনালে সেটা হবে না। এবং ২৪টি বের্ডিং ব্রিজ থাকবে, যার ১২টি নির্মাণ করা হচ্ছে প্রথম দফায়, আর সাথে থাকবে ১৩টি চেক-ইন বেল্ট। ” বর্তমান টার্মিনালগুলোর আয়তন এক লক্ষ বর্গমিটার, কিন্তু নতুন টার্মিনালের আয়তন হবে দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার বর্গমিটার।

২১,৫০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে এই টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পেয়েছে মিৎসুবিশি, ফুজিতা ও স্যামসাংএর সমন্বয়ে এভিয়েশন ঢাকা নামে একটি কনসোর্টিয়াম। মোট ব্যয়ের মধ্যে ৫,০০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে, আর বাকিটা আসবে জাপানি সংস্থা জাইকার ঋণ থেকে। ভবিষ্যতে তৃতীয় টার্মিনালের জন্য একটি রানওয়ে করারও প্রস্তাব রয়েছে।