লিবিয়া সংকট নিরসনের প্রতিশ্রুতি বিশ্বনেতাদের

0
405

বার্লিন, জার্মানি- লিবিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় একমত হয়েছেন বিশ্বনেতারা। গৃহযুদ্ধে অবৈধ বিদেশী হস্তক্ষেপের ইতি টানার প্রতিশ্রতি দিয়েছেন। প্রতিশ্রতি বাস্তবায়নে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর ওপর অস্ত্রক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলেছেন তারা। লিবিয়া ইস্যুতে রোববার জার্মানির বার্লিনে শান্তি সম্মেলনে ত্রিপোলির বিবাদমান দু’পক্ষের উপস্থিতিতে বিশ্বনেতারা এ অঙ্গীকার করেন। এ ব্যাপারে একটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছে তুরস্ক, রাশিয়া ও ফ্রান্স।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান বলেন, লিবিয়ায় কিছু তুর্কি সামরিক উপদেষ্টা পাঠানো হয়েছে। এখনও কোনো পাঠানো হয়নি। আলোচনার অন্যান্য পক্ষগুলো চুক্তি মেনে চললে তিনিও মেনে চলবেন। তিনি সেনা পাঠাবে না। খবর এএফপির।

লিবিয়ার শান্তি ফেরাতে রোববার জার্মানির বার্লিনে আন্তর্জাতিক লিবিয়া সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের প্রধান উদ্যোক্তা জার্মানির চ্যান্সেলর আঞ্জেলা মার্কেল। লিবিয়ার যুদ্ধরত দুই পক্ষসত এতে যোগ দেয় ১০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা। বার্লিনের চ্যান্সেলর ভবনে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল, বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে যে হানাহানি ও গৃহযুদ্ধ চলেছে, তার অবসান ঘটানো। এ ছাড়া লিবিয়ায় সম্প্রতি গৃহীত যুদ্ধবিরতিকে সুসংহত করা ও বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হওয়া।

লিবিয়ার ক্ষমতাশালী জেনারেল খলিফা হাফতার ও জাতিসংঘ সমর্থিত গভমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ড (জিএনএ) -এ দুই পক্ষই সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও প্রতিনিধিরা একে অপরের সঙ্গে দেখা করেননি। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জলা মার্কেল অবশ্য জানিয়েছেন, বিবাদমান এই দুই পক্ষ পরস্পর আলোচনায় বসেনি বলে উপস্থিত অন্যান্য পক্ষগুলো সম্মেলনের বিষয়ে তাদেরকে ব্রিফ করেছে এবং তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসেছে।

তিনি বলেন, কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ নয়, রাজনৈতিক উপায়ে লিবিয়া সঙ্কটের সমাধান চান তিনি। সম্মেলন শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, লিবিয়ার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বনেতারা ‘পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। ওই সময় লিবিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের অবসানে বিদেশি হস্তক্ষেপ বন্ধের কথা জানান ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও তুরস্কের প্রতিনিধিরা।

২০১১ সালে পশ্চিমা আগ্রাসনে প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি নিহত হওয়ার পর থেকেই লিবিয়ায় অশান্তি বিরাজ করছে। গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশৃঙ্খলার মধ্যে থাকা লিবিয়া বিভক্ত হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক বিভক্তির ফলশ্রুতিতে ত্রিপোলিতে জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত একটি দুর্বল প্রশাসন দেশটির পশ্চিমে সরকার পরিচালনা করছে এবং পূর্বের অঞ্চলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার হাফতারের নেতৃত্বাধীন এলএনএর সাথে জোটবদ্ধ হয়ে শাসন পরিচালনা করে আসছে।

এদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনো মিলিশিয়া এবং বিদেশী সরকার দ্বারা মদদপুষ্ট হয়েছে। হাফতার বাহিনী গত এপ্রিলে ত্রিপোলি দখলের লক্ষ্যে আকস্মিক সামরিক হামলা শুরু করে। হাফতারের নেতৃত্বাধীন এলএনএ এবং পূর্বাঞ্চলের সরকার ফ্রান্স, রাশিয়া, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অন্যান্য আরব দেশগুলোর সমর্থন পাচ্ছে। অন্যদিকে ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে ইতালি, তুরস্ক এবং কাতার। লিবিয়া সরকারের অনুরোধে গত সপ্তাহে তুর্কি সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান।