পরিবেশবান্ধব ও পরিচ্ছন্ন একটি শহরের প্রত্যাশা

0
459

১ ফেব্রুয়ারি ২০২০-এ রাজধানী ঢাকার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিন নগরের ভোটাররা ঢাকা দক্ষিণ এবং ঢাকা উত্তরের মেয়র কে হবেন, সেটা নির্ধারণ করবেন। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের শেষ মুহূর্তের প্রচারণার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। প্রচারণায় তারা ভোটার পরিবেশবান্ধব সবুজ নগরের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত নগরীর একটি এবং প্রতিবছর শহরটির অনেক মানুষই পরিবেশ দূষণের ফলে সৃষ্ট রোগে ভুগে মারা যান। সীমিত সম্পদ দিয়ে এই মেগাসিটির ক্রমবর্ধমান বর্জ্য অপসারণ করা ঢাকার যেকোনো মেয়রের জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ৭৭৮ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারে তারা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনে মোড়ানো বা লেমিনেটেড পোস্টার, ব্যানার ব্যবহার করছেন। আর এর ফলে পরিবেশবান্ধব সবুজ শহর গড়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

পলিথিনে মোড়ানো বা লেমিনেটেড পোস্টার পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এই প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো অপসারণ করতে সিটি কর্পোরেশনের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে। সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে যৌথভাবে করা এক বেসরকারি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শহরগুলোতে যে প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, তার মাত্র ৩৬% আবার ব্যবহারের জন্য প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ৩৯% মাটিতে ফেলে দেয়া হয়। আর ২৫% পানি এবং মাটিকে দূষণ করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই পলিথিনে মোড়ানো বা লেমিনেটেড পোস্টারের পরিবেশের উপর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই পোস্টারগুলো শেষমেষ শহরের ড্রেনে গিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি করবে বলে তারা আশংকা করছেন।

মানবাধিকার কর্মী মাহমুদুল হাসান তার ফেইসবুকে লিখেছেন:উন্নত বিশ্ব যখন পরিবেশ রক্ষায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছে তখন আমাদের শহর পরিবেশের জন্য অতিব ক্ষতিকারক লক্ষ লক্ষ পলিথিনের পোস্টার দিয়ে ছেয়ে ফেলা হয়েছে। এইসব পোস্টার যারা ঝুলিয়েছে তাদের ভোট দেয়া তো দুরের কথা তাদের প্রত্যেকের নামে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা উচিত। এদের কেউ ভোট দিবেন না, এরা শুধু আমাদের জন্য নয় সারা পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকারক প্রাণী।

পশ্চিম আগারগাঁও এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, নগরপিতার দায়িত্ব পেতে নির্বাচনের প্রচারণায় যারা নেমেছেন, তারা নাকি ঢাকাকে গ্রিন করবেন ক্লিন করবেন। এই তবে ক্লিন করার নমুনা? কোনো একজন প্রার্থীকে আপনি খুঁজে পাবেন না যিনি পলিথিনে তার পোস্টার মোড়াননি। আমার তো মনে হয় যে, পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারগুলো যে পরিবেশবান্ধব নয়, এই ধারণাই তাদের নেই। তাছাড়া সরকারের স্টেকহোল্ডারগুলোরও জবাবহিদিতা নেই, পলিথিনে ঢাকা ছেয়ে গেলেও তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা বেশিরভাগই বসবাস করেন রাজধানী ঢাকাতে। তাদের চোখের সামনেই ব্যবহার হচ্ছে পরিবেশের ক্ষতিকারণ লেমিনেটেড পোস্টার। বিষয়টি নিয়ে তারা কিছু করছেন না, সেদিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল্লাহ মাহমুদ লিখেছেন: হিসাব কষে দেখুন কতশত টন পলিথিন মোড়ানো পোস্টার ঢাকার আকাশ ঢেকে রেখেছে! নির্বাচন শেষে এই টন টন পলিথিন হয় বস্তিতে বস্তিতে জ্বালানী হয়ে পুড়ে বায়ুদূষণ ঘটাবে, নয়তো আবর্জনা হিসেবে ড্রেনে ঢুকবে, মাটিতে মিশবে।

নির্বাচনী প্রচারে প্রার্থীরা নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সেখানে ঢাকাকে সিঙ্গাপুরের মতো আধুনিক শহর করারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সাদ্দাম হোসেন নামের একজন টুইটার ব্যবহারকারী আবর্জনামুক্ত ঢাকা শহর চেয়ে টু্ইট করেছেন: লাগবে না আমার সিঙ্গাপুর সিটি কিংবা লাস ভেগাস; যিনি নির্বাচনে জয়ী হবেন, তিনি যেন নির্বাচন শেষ হওয়ার ১ সপ্তাহের ভিতর ঢাকাকে পোস্টার মুক্ত করেন। দেশ ডিজিটাল হয়ে গেছে…আর আপনারা এখনও মোঘল আমলের প্রচারণাতেই পড়ে আছেন l

প্রায় সব প্রার্থীই একই রকম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তারা নির্বাচিত হলে বাসযোগ্য নগর গড়বেন। তাদের মুখে শোনা যাচ্ছে পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ গড়ার স্বপ্নের কথা। কিন্তু নির্বাচনে নামার পর তাদেরই প্রচারণায় দূষিত হচ্ছে নগরের পরিবেশ। কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী থেকে শুরু করে মেয়র প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় বানানো পোস্টার-প্ল্যাকার্ড ঝুলছে নগরজুড়ে। আর এসব প্রচারণা সামগ্রী ঝোলানো হয়েছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনে মুড়িয়ে। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, নিজেরাই নিষিদ্ধ পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারে শহর ভরে দিয়ে কীভাবে তারা ‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ গড়বেন?