হালাল ও হারাম
ইসলামি শরিআ`তে হালাল ও হারাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পৃথিবীর সব আসমানি গ্রন্থেই হালাল-হারামের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। হালাল-হারামের বিষয়গুলো নির্ধারিত করার ইখতিয়ার শুধুমাত্র আল্লাহর বিধায় বাস্তবজীবনে হালাল কাজ করা আর হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার নামই হচ্ছে ইবাদত।
হালাল শব্দের আভিধানিক অর্থ সিদ্ধ। আর শরীয়তের ভাষায় যা করার অনুমতি দিয়েছে বা করতে নিষেধ করেনি এমন বস্তু বা কাজকে হালাল বলে। হারাম শব্দের আবিধানিক অর্থ নিষিদ্ধ। আর শরীয়তের ভাষায় যা স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন, যা করার পরিণামে পরকালে শাস্তি অনিবার্য এরূপ বস্তু ও কাজকে হারাম রূপে আখ্যায়িত করা হয়। পৃথিবীর সব বস্তুই মৌলিকভাবে বৈধ। তবে আল্লাহ তায়ালা যদি কোনো বস্তুকে হারাম বলে ঘোষণা করেন তবে কেবল সেটিই হারাম বলে গণ্য হবে। হালাল শব্দটি খাদ্য-পানীয়-র সাথে দৈনন্দিন জীবনের সব বিষয়টাও বোঝায় ও মনোনীত করে। এটি ৫টি আহকাম-র মধ্যে ১টি — ফরজ (আবশ্যিক), মুস্তাহাব (প্রস্তাবিত), হালাল (অনুমোদনযোগ্য), মাকরুহ (অপছন্দ), হারাম (নিষিদ্ধ) — ইসলামে মানুষের কর্ম নৈতিকতা নির্ধারণ করে। ইসলাম ধর্মে মুবাহ-ও “অনুমোদনযোগ্য” বা “অনুমোদিত” অর্থ বোঝায়।
বিশ্বমানবতার কল্যাণ সাধন এবং অকল্যাণ ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করা। হালাল বিধান পালনেই বান্দার জন্য রয়েছে- আত্মার কল্যাণ, দেহের কল্যাণ এবং বিবেক-বুদ্ধির সুস্থতা। যা দ্বীন-ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এতে আল্লাহ বান্দার প্রতি নাজিল করেন রহমত ও বরকত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি হারাম কাজ করে তার অন্তর-আত্মা নষ্ট হয়ে যায়, দেহের ক্ষতি হয় এবং বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। যা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় বহন করে। এক কথায় তাকে গোনাহগার বানিয়ে দেয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য সব ধরনের কঠোরতা তুলে নিয়ে ইসলামের হালাল ও হারামের বিধান মানুষকে অশান্তির শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ থেকে নিষ্কৃতি দান করেছেন।
হারাম জিনিস ভক্ষণ ও হারাম উপার্জন ব্যক্তি সমাজ ও জাতির জন্য চরম ক্ষতিকর। হারাম বস্তু মানুষের দেহ ও মনের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে, নৈতিক অধঃপতনের প্রেরণা জোগায়। যেমন মাদকদ্রব্য সব অপকর্ম ও অশ্লীলতার মূল এবং দেশের অমূল্য সম্পদ যুবসমাজকে ধ্বংসের মোক্ষম হাতিয়ার। সুদ শোষণের শক্তিশালী মাধ্যম। সুদ প্রথা ধন-সম্পদকে সমাজের মুষ্টিমেয় পুঁজিপতির হাতে কুক্ষিগত করে দেয়। অর্থাৎ , প্রতারণা, সুদ-ঘুষ, ওজনে কম দেয়া, দ্রব্যে ভেজাল দেয়া, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, জুয়া, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসায় ইত্যাদি প্রত্যেকটি কর্মই হারাম উপার্জনের সাথে জড়িত। তাই মুমিনের প্রধান দায়িত্ব হালাল উপার্জন করা এবং হারাম থেকে বিরত থাকা।
কিছু হারাম কাজ যা আজকাল হারাম মনে করা হয় না যেমন:
১। অপরিচিত নারী-পুরুষের সাথে হাত মিলানো।অথচ ইসলামে নারী ও পুরুষ একে অপরের সাথে
হাত মিলানো ।
২।অশুভ লক্ষণে আকিদা রাখা। যেমন ঘর থেকে বের হওয়ার সময় হুছট খেল মনে করল এটা অশুভ লক্ষন অথচ ইসলামে এধরনের কোন বিশ্বাস বা আকিদাকে সমর্থন করে না।
৩।গনকের গননা, রাশিফল বিশ্বাস করা।
৪।গুনাহ করে তওবা না করা, আল্লাহ গুনাহ মাফ করবেনা বলে ধারনা করা, অথচ আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইওনা, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপসমুহ ক্ষমা করবেন।
৫।আল্লাহর কাছে দোয়া করাকে গুনাহ মনে করা এটা একটি বড় গুনাহ, অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেন আমার কাছে দোয়া কর আমি জবাব দিব।
৬।বান্দা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করা।মাথা ছুয়ে কসম, সন্তানের কসম, মায়ের কসম, বাবার কসম এসব গুনাহে লিপ্ত অথচ প্রিয় নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কসম খেল সে শিরিক করল।
৭।বাজনা ও অশ্লিল গান শুনা হারাম অথচ এখন এ কাজটি সহসা কেহ হারাম মানতে রাজি না।
৮। লুকিয়ে লুকিয়ে কারো কথা শুনা।নবী করিম (দঃ) এরশাদ করে যদি কেহ কারো কথা লুকিয়ে লুকিয়ে শ্রবন করে কেয়ামতের দিন তার কানে গলিত শিশা ঢালা হবে।
৯।গীবত, বোহতান ও চুগলি করা অনেক বড় গুনাহ। অথচ আজকাল এসব ছাড়া কোন আড্ডাই জমে না।
১০।মিথ্যা বলা, মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে কিন্তু আজকাল সব ক্ষেত্রেই মিথ্যার ছড়াছড়ি।
১১।নকল চুল বা পরচুলা ব্যবহার করা ।
১২।চুলে কালো রং বা কালি ব্যবহার করা। তবে মেহেদী ব্যবহার করা যায়েজ।
১৩।নারীরা পাতলা ও বডি ফিটিং কাপড় পরিধান করা।
১৪।নারীরা খুশবু বা সেন্ট ব্যবহার করে ঘরের বাহিরে অনুষ্ঠানে, বাজারে যাওয়া, তবে শুধু ঘরে স্বামীর জন্য নারীরা খুশবু ব্যবহার করতে পারবে।
১৫।পুরুষ মানুষ স্বর্ণ ও রেশমের কাপড় ব্যবহার করা ।
১৬।পুরুষের টাখনুর নিচে কাপড় ছুলিয়ে পরিধান করা ।
১৭।হারাম রোজগার করা, সুদ, ঘুষ, চুরি, প্রতারনা, ধোকা, মিথ্যার মাধ্যমে উপার্জন করা ।
১৮।কারো কাছ থেকে কর্জ নিয়ে তা আর ফেরত না দেয়া।
১৯।কর্মচারীদের বেতন সময়মত না দেয়া। কাজ করিয়ে বেতন বাকী রাখা।
২০।জুমার দিন আযানের পরও ব্যবসায় করা, কেনা বেঁচা করা।
২১। বিক্রীর সময় মালের দোষ ত্রুটি ক্রেতার কাছে গোপন করা।
২২।ব্যবসার মধ্যে সুদের টাকা ইনভেস্ট করে হালাল ব্যবসাকে হারাম করে ফেলা ।
২৩।স্ত্রী স্বামীর কাছে কোন শরীয়ী কারন ছাড়া তালাক ডিমান্ড করা। বিনা কারনে বিনা ওজরে খোলা তালাক গ্রহণকারীনি নারী এ উম্মতের মুনাফেক।
২৪।স্বামীর ডাকে স্ত্রী সাড়া না দেয়া ।
২৫।লুত (আঃ) এর জাতীর যে কু অভ্যাস ছিল পুরুষ পুরুষের সাথে সম্পর্ক এমনতর গুনাহে লিপ্ত হওয়া।
২৬।জেনা-এ জেনার ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা সুরা বনি ইসরাইলের ৩২ নং আয়াতে এরশাদ করেন খবরদার জেনার নিকটেও যেও না এটা অনেক বড় নির্লজ্জতা।
২৭। দুর্গন্ধ যুক্ত খাবার যেমন সিগারেট, পিয়াজ, রসুন খেয়ে মসজিদে আসা।
২৮। এত ছোট টি শার্ট পরিধান করে নামাজ পড়া সিজদায় গেলে পিছনের সতর খুলে যায়।
২৯।ইমামের আগে আগে রুকু সিজদা করা
৩০।নামাজে চুরি করা। নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন সবচেয়ে বড় চুরি হল নামাজের চুরি, সাহাবাগন প্রশ্ন করল এয়া রাসুলাল্লাহ নামাজের চুরি কি? নবীজি উত্তর দিলেন ধীরস্থীরভাবে নামাজ না পড়া, রুকু থেকে সোজা না হওয়া, ২ সিজদার মাঝে সোজা না বসা মোট কথা অতি দ্রুত তাড়াহুড়া করে নামাজ পড়াকে প্রিয় নবীজি নামাজের চুরি বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আল্লাহ আমাদেরকে এসব ভুল কাজ করা থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন