শরিয়াহভিত্তিক সুকুক বন্ডের আবেদনের তারিখ ঘোষণা
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থায়নে সরকার নতুন একটি বন্ড ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে এটি প্রচলিত, সাধারণ বা ট্রেজারি বন্ড নয়। বিশ্বব্যাপী চালু আছে, এমন একটি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড এটি। এ ধরনের বন্ড ‘সুকুক’ নামে পরিচিত। সুকুক একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সিলমোহর লাগিয়ে কাউকে অধিকার ও দায়িত্ব দেওয়ার আইনি দলিল। সরকারের অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি উৎস সুকুক ইসলামি বন্ড ।গত ২৩ জুন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭৭৯তম নিয়মিত কমিশন সভায় তিন হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়। বেসরকারি পর্যায়ে প্রথমবারের মতো সুকুক বন্ড ছেড়ে বেক্সিমকো লিমিটেড এই টাকা তুলবে।
বিএসইসি সূত্র মতে, অ্যাসেট ব্যাকড গ্রিন সুকুক ইস্যুর মাধ্যমে বেক্সিমকো ৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড ছেড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এটি কনভার্টেবল অথবা রিডিমেবল হতে পারে। অর্থাৎ বন্ডের একটি অংশ সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরের সুযোগ থাকতে পারে; আবার মেয়াদ শেষ সম্পূর্ণ অবসায়নের বিকল্পও থাকতে পারে এতে। এ টাকায় বেক্সিমকো তাদের টেক্সটাইল ব্যবসা সম্প্রসারণ করবে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। বেসরকারি পর্যায়ে এটিই প্রথম সুকুক বন্ড। এর আগে সুকুক বন্ড ছেড়ে সরকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে দুই দফায় সেই অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে।
সুকুকের মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থ বেক্সিমকোর দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হবে। কোম্পানি দুটি হচ্ছে তিস্তা সোলার লিমিটেড ও করতোয়া সোলার লিমিটেড। এই দুটি কোম্পানি সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে এবং এর মাধ্যমে পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে।
বন্ডের ৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৭৫০ কোটি টাকা বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে এবং ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শেয়ারহোল্ডার ব্যতিত অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। বাকী ৭৫০ কোটি টাকার বন্ড প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ইস্যু করা হবে।
সুকুকের প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য হবে ১০০ টাকা। আর ৫০ টি ইউনিট নিয়ে এর ন্যুনতম লট। এ হিসেবে এ লটের দাম ৫ হাজার টাকা। বন্ডের মেয়াদী পরিশোধের ন্যুনতম হার হবে ৯ শতাংশ।
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেডর প্রস্তাবিত সুকুক বন্ড বা ইসলামী শরীয়াহসম্মত বন্ডের আবেদন গ্রহণ শুরু হবে আগামী সোমবার (১৬ আগস্ট)। আবেদন গ্রহণ চলবে সোমবার (২৩ আগস্ট) পর্যন্ত। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বেক্সিমকোর এই সুকুকের ইস্যু ম্যানেজার, অ্যারেঞ্জার ও অ্যাডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড এবং অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। আর ট্রাস্টি হিসেবে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।
শরিয়াহভিত্তিক নিরাপদ বিনিয়োগ ইন্সট্রুমেন্টে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে শরিয়াহভিত্তিক বন্ড ইস্যু, এ খাতের তারল্যকে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের উৎস হিসেবে ব্যবহার, সরকারি ঋণের পোর্টফোলিও সম্প্রসারণের মাধ্যমে ঝুঁকি হ্রাস এবং ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সরকার ইসলামি বন্ড ‘সুকুক’ ইস্যু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
১৯৮৯ সালে বেক্সিমকো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটি বি ক্যাটাগড়িতে লেনদেন হচ্ছে। বেক্সিমকোর অনুমোদিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৮৭৬ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মোট শেয়ারের ৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং ৫২ দশমিক ৮০ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।