ফেইক নিউজ

0
104

ফেইক নিউজ

প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যমে কতো কতো খবর আসে ৷ এক সময়ে সীমিত আকারে রেডিওর ব্যবহার থাকলেও পত্রিকাই ছিল একমাত্র সংবাদ মাধ্যম । কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে প্রযুক্তির উন্নয়নে এবং ব্যবহারে প্রায় সব ধরনের সংবাদ সামাজিক মাধ্যমে এখন পাওয়ায় যায় । এতে সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়া বা মন্তব্য করার এক নবযুগের সূচনা সৃষ্টি হয়েছে । সঠিক তথ্য দেওয়ার চেয়ে কিভাবে প্রকাশ করলে প্রচার বাড়বে, সেদিকে সংবাদ মাধ্যম বেশি মনোযোগী ৷

সারা বিশ্বে সংবাদ মাধ্যমকে বরাবরই শাসকগোষ্ঠী প্রতিপক্ষ বলে মনে করে ৷ এর যৌক্তিক কারণও রয়েছে ৷ সাংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে যেমন মানুষ ভাল কিছু হনিতে পারে তেমনি, যেকোনো বিচ্যুতি, মনগড়া খবরের কারনে সমাজে বিশৃঙ্খলাও সাংবাদিকদের মাধ্যমেই আসে । সাংবাদিকরাই খুঁজে বের করেন এবং প্রকাশ করেন ৷ সাংবাদিকদের কোনঠাসা করার চেষ্টা গোপনে বরাবর থাকলেও এমন সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করা বিশ্বজুড়ে এর আগে দেখা যায়নি ৷

২০১৬ সালে আমেরিকায় সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে দুনিয়াজুড়ে আলোচিত হয়ে ওঠে ফেইক নিউজ শব্দটি। ফেইক নিউজ পরিবেশনের মাধ্যমে আমেরিকার নির্বাচন প্রভাবিত হয়েছিল । মিথ্যা সংবাদ, নেতিবাচক প্রচারনা মূলক সংবাদ সবর্ত্র নিত্যদিনের ঘটনা ছিল ৷ যার কারনে সাংবাদিকদের ওপর হামলা মামলা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলধারার গণমাধ্যম জনগণ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়াতে ফেইক নিউজ বা মিথ্যা খবর এতো বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। রাজনৈতিক চাপ, পক্ষপাতিত্ব বা বিভিধ সেন্সরের কারণে সারা বিশ্বে সংবাদমাধ্যম এখন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে ৷ সংবাদ প্রকাশ হলে এখন পাঠক সেটার নীচে কমেন্টে দালাল’, ফেইক, ভূঁয়া লিখে আসে ৷ বিশ্বজুড়েই সাংবাদিকদের প্রতি মানুষের এতো বেশি অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, কোনো সংবাদ এখন আর তারা বিশ্বাস করতে চান না, বরং নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী অনলাইন ঘেঁটে সংবাদের সইত্যতা খুঁজে নিতে চেষ্টা করে। ভুঁইফোড় সংবাদমাধ্যম সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে জায়গা করে নিচ্ছে সংবাদ জগতে ৷ মিথ্য়া-মনগড়া সংবাদ বায়ুবাহিত ভাইরাসের মতো, না চাহিলেও নেটে পাওয়া যায়৷ বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যখন গণমাধ্যমের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে তখন শুধু সাংবাদিক নয়, যেকোনো শুভবুদ্ধির মানুষেই শঙ্কিত ৷

সংবাদ মাধ্যম প্রতিযোগিতা করবে, সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতিপক্ষ হতে পারে৷ কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতা যখন রুদ্ধ হয়, তখন প্রতিযোগি দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়লে গণমাধ্যমের শক্তিশালী ভূমিকা ব্যহত হবে, একথা সবাই ভুলে যায় ৷

দুনিয়া জুড়ে এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম ফেইক নিউজ- মনগড়া বা ভুয়া সংবাদ ছড়ানো। গণমাধ্যমের প্রকৃতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ফেইক নিউজের প্রকৃতিও পরিবর্তিত হয়েছে। এখন শুধুমাত্র সংবাদ মাধ্যম নয় বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে পড়ছে।

অনেক সময় সংবাদ মাধ্যম এবং প্রতিপক্ষ পারস্পরিক কারসাজি এবং স্বার্থের একটি দুষ্ট চক্র বাক স্বাধীনতার নামে সংবাদ প্রতিবেদন করছে । সংবাদ মাধ্যমের মালিকানা সমস্যা একটি বড় সমস্যা অসৎ, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক, ব্যবসায়ীরা সংবাদপত্র বোঝেন না এমন লোকজন মালিক হয়েছেন ৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পাদকের চেয়ারেও বসেছেন ৷ তখন সঠিক সংবাদ পরিবেশন কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্য়া বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা আলাদা করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে ৷ এর পেছনে সাংবাদিকদের দায় সবচেয়ে বেশি ৷ সব সংবাদ মাধ্যম খারাপ নয়। কিছু স্বাধীন প্রকাশনা আছে যারা নিরপেক্ষভাবে রিপোর্ট করছে এবং আমাদের আসল চিত্র তুলে ধরছে ।

ফেক নিউজ সামাজিক সমস্যাগুলির মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক সমস্যা । সাম্প্রতিক একাডেমিক কাজে, ফেইক নিউজের একটি টাইপোলজি চিহ্নিত করা হয়েছে যা বৈধ অভিব্যক্তি, যেমন, নিউজ প্যারোডি এবং ব্যঙ্গ, এথেকে সর্বাত্মক প্রচারণার মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ কার্যকলাপকে কভার করে। মিথ্যা সংবাদ রাজনীতিবিদদের জবাবদিহিতাকে দুর্বল করে দিতে পারে, এবং নাগরিকদের পক্ষে সত্য কী তা জানা কঠিন করে তুলতে পারে। সবচেয়ে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হল নাগরিকদের নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য একটি কৃত্রিম বিশ্বদর্শন তৈরি করতে ফেইক নিউজের ক্ষমতা যা নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাস্তবতাকে বিকৃত করে। সাম্প্রতিক