ভারত-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক সত্ত্বেও সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বেড়েছে তিনগুন!-আইন ও সালিশ কেন্দ্র

0
680

ভারত-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক সত্ত্বেও সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বেড়েছে তিনগুন!-আইন ও সালিশ কেন্দ্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক  বিশ্ব অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে গর্বভরে প্রচার করে দুই দেশ । কিন্তু এত সুসম্পর্ক থাকার পরও ২০১৯ সালে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর হাতে বাংলাদেশিদের প্রাণহানির সংখ্যা তিন গুন বেড়ে গেছে বলে খবর দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের সন্বিবেশ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র তাদের প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

সংস্থাটি জানুয়ারি ০১, ২০২০  তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানিয়েছে, ২০১৯ সালে ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী- বিএসএফ এর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে ৩৭ জন বাংলাদেশি এবং তাদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন আরো ছয় জন। সীমান্তে প্রাণহানির এ সংখ্যা গত একবছরে তিন গুণ বেড়েছে। এ ছাড়া বিদায়ী ২০১৯  সালে বিএসএফ এর হাতে আহত হয়েছে ৩৯ জন এবং আটক হয়েছে আরো ৩৪ জন। এ বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, ‘সীমান্তে হত্যার বিষয়টি এক বছরে প্রচুর বেড়েছে। সীমান্ত পারাপার হচ্ছে এমন কাউকে দেখলেই গুলি করে দিচ্ছে বিএসএফ। তাদের এমন আচরণ বদলাতে হবে।’

তিনি বলেন, দুই দেশের সীমান্তে অভিন্ন পাড়া রয়েছে। যেখানকার উভয় দেশের  বাসিন্দারা আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করা ছাড়াও জীবিকার সন্ধানেও  সীমান্ত পারাপার হয়ে  থাকে।

তিনি বলেন ‘দু দেশেরই আইন অনুযায়ী, এসব মানুষদের গ্রেপ্তার ও বিচার করার কথা। দুদেশের সরকারি বাহিনীই যদি এটি মেনে চলেন তাহলে দেখা মাত্রই গুলি করার কথা নয়। কিন্তু সেটাই করা হচ্ছে। সীমান্তে এসব হত্যাকান্ডকে মারাত্মক ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে এসব বাংলাদেশিদের অবৈধ ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। শিপা হাফিজ আশঙ্কা করে বলেন যে, ভারতে নতুন যে নাগরিকত্ব আইন করা হয়েছে এর কারণে আরো বেশি মানুষ সীমান্ত পার করতে পারে।

এ প্রসংগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড: আকমল হোসেন বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে যেভাবে উচ্চ মাত্রায়  বলে বর্ননা করা হচ্ছে তার সাথে সীমান্ত হত্যা তিনগুন বেড়ে যাওয়ার মতো  ঘটনা কোনভাবেই গ্রহনযেগ্য হতে পারে না। বিএসএফ-এর গুলিতে উত্তরের সীমান্তে ফেলানী হত্যার পর বাংলাদেশের দাবির মুখে ২০১৪ সালে দিল্লিতে বিএসএফ ও বিজিবির মহাপরিচালকদের বৈঠকের পর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে একটি সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু সেটি পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ এর চেয়ারম্যান এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, সীমান্তে আমরা ভারতীয়দের গুলি করি না, কিন্তু তারা (বিএসএফ) বাংলাদেশিদের ওপর গুলি চালায়। আর বিএসএফ’র কর্তারা পরিস্থিতি দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে না বলেই সীমান্ত হত্যা বেশি ঘটে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিশ্বের প্রায় সবদেশেরই প্রতিবেশীর সাথে অভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মানুষ আসা-যাওয়া করে। কিন্তু তাই বলে তাদের হত্যাকরা কোন সমাধান নয় ।সীমান্তে বিএসএফ এর হাতে বাংলাদেশিদের হত্যা থামাতে হলে রাজনৈতিক প্রচেষ্টা ও নিয়ন্ত্রণ দরকার। তাছাড়া, এ বিষয়টি বরং মাঝে মাঝেই আমাদের প্রতিবেশী বন্ধুদেরকে মনে করিয়ে দিতে হবে যে,সীমান্ত হত্যা গ্রহণযোগ্য নয়।