সংসদে ২০২০-২১ বাজেট পেশ

0
566

কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বাজেট অনুমোদনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিশেষ মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরের ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন বক্তব্য শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। এ বছর মানুষের জীবন রক্ষা আর জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে বাজেটের শিরোনাম করা হয়েছে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ: ভবিষ্যত পথ পরিক্রমা’।এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের এডিপিতে সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে ১০টি খাত। এর মধ্যে কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতে থাকবে বিশেষ গুরুত্ব। সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেট চলতি (২০১৯-২০)অর্থবছরের মূল বাজেটের থেকে ১২ শতাংশ বেশি। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু পণ্য ও সেবায় বাড়তি কর আরোপ করায় কিছু পণ্য ও সেবার দাম বাড়ছে।২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫.০১ শতাংশ। ঘাটতি এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বেশি দিন থাকবে না। দেশ স্বাভাবিক হলে আবারও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।

দাম বাড়বে যেসব পণ্যের : অনলাইন খাবার, অনলাইন কেনাকাটা, রঙ, বিদেশি টিভি, সিগারেট, সোডিয়াম সালফেট, আয়রন স্টিল, স্ক্রু, আলোকসজ্জা সামগ্রী, কম্প্রেসার শিল্পে ব্যহহৃত উপকরণ, বার্নিশ, বাইসাইকেল, আমদানি করা অ্যালকোহল, শ্যাম্পু, জুস, ইন্টারনেট খরচ, আমদানি করা দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, মোবাইল খরচ, চকলেট, বিদেশি মোটরসাইকেল, বডি স্প্রে।শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লঞ্চের টিকিট আগে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর ছিল, নতুন অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়ার ওপর সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ থেকে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আসবাবপত্র কেনায় মূসক বেড়েছে। ৫ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। কার ও জিপ রেজিস্ট্রেশনসহ বিআরটিএ প্রদত্ত অন্যান্য সার্ভিস ফির ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সিরামিকের সিঙ্ক বেসিনের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বিদেশি মধুর দাম বাড়বে।

 দাম কমতে পারে যেসব পণ্যের: স্বর্ণ আমদানিতে মূসক অব্যাহতি। অটো মোবাইল ফ্রিজ এসির ওপর মূসক অব্যাহতি। ডিটারজেন্টের কাঁচামালের ওপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাবস, স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপারের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা বাড়ানো হবে। ইস্পাত শিল্পের রিফ্রাক্টরি সিমেন্টের ওপর শুল্ক কমানো হবে। এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমতে পারে। রেফ্রিজারেটর ও এসির কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে।ওষুধ, চিনি, হস্তচালিত কৃষি যন্ত্রপাতি, পল্ট্রি, ডেইরি, মৎসশিল্পে ব্যবহৃত উপকরণ, ইলেক্ট্রিকাল সিগনাল যন্ত্রপাতি, আইসিইউ যন্ত্রপাতি।

 প্রস্তাবিত বাজেটে আয়করে  ছাড়: ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা এবং করহার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে। করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা। এর বেশি বার্ষিক আয় থাকলে এলাকাভেদে ন্যূনতম ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা আয়কর দেয়ার বিধান আছে। নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ৩ লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী করদাতারা ৪ লাখ টাকা ও গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতারা ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়ে কোন কর দিতে হয় না। সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। একইভাবে সর্বনিম্ন করহার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৪৭ লাখ টাকা বেশি আয় হলে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ হারে আয়কর দেয়ার বিধান রয়েছে।

প্রতি বছর বাজেট উপস্থাপন দেখতে তিন বাহিনী প্রধান, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, গণমাধ্যমের সম্পাদক, অর্থনীতিবিদসহ পেশাজীবীদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবার তা হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতির কারণে সংসদীয় ইতিহাসে অন্যরকম একটি বাজেট অধিবেশন হতে যাচ্ছে এবার।