ভেষজ চিকিৎসার গুরুত্ব কম নয়

0
600

দখিনা বিশেষ রচনা: ভেষজ চিকিৎসার গুরুত্ব কম নয়

আহমদ রফিক

পাশ্চাত্যধারায় বিকশিত চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি কম হয়নি। তবে বিজ্ঞানের কোনো কোনো বিভাগের তুলনায় কিছুটা কম নয়। কিন্তু নতুন নতুন ড্রাগ অর্থাৎ ওষুধ চিকিৎসার নব্য কান্ডারী, আর সার্জারি (শল্য চিকিৎসা) তো অনেক ধাপ এগিয়ে- অভিজ্ঞতার সিঁড়িতে ধাপে ধাপে। তবু রোগস্বাস্থ্য ও শরীর নিয়ে অনেক কিছু জানার বাইরে, নাগালেরও বাইরে।

এর মধ্যে যদি কেউ ‘ফোক মেডিসিন’ অর্থাৎ লোক চিকিৎসা এবং প্রাচীন ধারায় ‘ট্রাডিশনাল মেডিসিন’ অর্থাৎ ভারতীয় আয়ুর্বেদী ও ইরানী ইউনানী চিকিৎসার কথা বলি তাহলে হয়ত অনাগ্রহ দেখাবেন। কিন্তু মজাটা হল উপমহাদেশের এবং ইরান ও আফগানিস্তানে সনাতনী চিকিৎসার যথেষ্ট চাহিদা ও কদর বিশেষ করে নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবর্গীয়দের মধ্যে।

তবে ব্যতিক্রমও আছে। মার্কিনীরা বড় হুজুগে যখন যেটা মনে হয় সেটা নিয়ে তুলকালাম বাধায় এবং প্রায়শ তা সাময়িক। যেমন- কিছুকাল আগে আমেরিকায় খুব ঝোঁক দেখা গিয়েছিল- ‘ন্যাচারাল ফুড’ ন্যাচারাল ‘ট্রিটমেন্ট’ নিয়ে। দশক কয়েক আগে একটা বই হাতে এসেছিল, ডি.গ. জার্ভিস নামে একজন পেশাজীবী চিকিৎসকের লেখা বই ‘ফোক মেডিসিন’ ঐতিহাসিক তথ্য ও আপন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। তাতে রয়েছে লোক চিকিৎসার অনেক জারিজুরি কথা। বইটি আবার প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ‘বেস্ট সেলার’ তবে লোক চিকিৎসার গুণমান বা মূল্যমান আমি উড়িয়ে দেই না নানা ঘটনার অভিজ্ঞতার কারণে। কোনো কোনো দুঃশ্চিকিৎসা রোগ দেখা গেছে লোক চিকিৎসায় নিরাময় হতে। কখনো আয়ুর্বেদী কখনো ইউনানীতে। আবার এদের রমরমা ব্যবসাও সমাজে এদের প্রভাবের কথা বুঝিয়ে দেয়।

লোক চিকিৎসার আরও একটি দিক আছে, যা ভেবে দেখার মতো। প্রত্যেক প্রাচীন সভ্যতার দেশেই দেখা যায়, প্রাকৃত চিকিৎসার ঐতিহ্য রয়েছে। পাহাড়ী এলাকায় বা সমতল ভূমি যেখানেই হোক লতাপাতা মূল কান্ডের ভেষজ গুণসহ গাছলতা ইত্যাদি অর্থাৎ চেনা-অচেনা ঔষধীর (ভেষজগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ) রয়েছে অস্তিত্ব। আর লোক চিকিৎসায় সেগুলোরই ব্যবহার হয়ে থাকে।

বাংলাদেশেরও তেমন ঔষধীর অভাব নেই, যেমন- সমতল ভূমির বনজঙ্গলে তেমনি চট্টগ্রাম, শ্রীহট্ট বা গারো এলাকার পাহাড়ী অঞ্চলে। ওষুধ কোম্পানিতে কাজের সুবাদে এবং ব্যক্তিগত আগ্রহে ষাটের দশকের (বিশ শতকের) প্রথম দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় গিয়েছিলাম। রাঙ্গামাটি থেকে শুভলং পাহাড়ী এলাকায়। সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী বন্ধু- পরিচয় হয় এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর সঙ্গে। তার কাছে গুটি বসন্তে নিরাময়ী লতার গুণের কথা শুনে অবাক হই। অথচ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে গুটি বসন্তের প্রতিষেধক টিকার ব্যবস্থা আছে, নিরাময়ের কোনো ওষুধ নেই। অবশ্য প্রতিষেধক টিকার সফল কার্যক্রমের দরুন ওই ভয়ংকর বৈনাশিক রোগ গুটিবসন্ত (স্মল পক্স) দেশে থেকে নির্মূল হয়ে গেছে। টিকা কার্যক্রম শুরুর আগে কত লোক যে এই বসন্ত রোগে মারা গেছে বা অন্ধত্ব বরণ করেছে তার কোনো হিসেব নেই। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রকৃতিজাত ঔষধীর অস্তিত্ব খুবই কম বাস্তব ঘটনা। প্রকৃতপক্ষে কত মূল্যবান ঔষধী যে প্রকৃতির কোণে লুকিয়ে আছে, কে তার খবর রাখে। লোক চিকিৎসাশাস্ত্রের কল্যাণে যেসব লতা, ফুল, ফল, পাতা মূল ও কান্ডের ভেষজগুণের কথা আমরা জানি। প্রাচীন চিকিৎসা বিধির রক্ষণশীলতার কারণে বহু মূল্যবান ভেষজের পরিচয় হারিয়ে গেছে। এ ইতিহাস আবেগ বলে উড়িয়ে দেবার জো নেই, যখন আমরা দেখি বাগানের ভেতরে বা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাগানের বাইরে যেখানে সেখানে ফুটে থাকা নীল-সাদা-বেগুনী নয়নতারা ফুল থেকে আধুনিক বিজ্ঞান উদ্ধার করতে পেরেছে লিউকিমিয়া নামক রক্ত-ক্যানসারের ওষুধ ‘ভিনক্রিস্টিন’ ভিনব্লাস্টিন’। অথচ এসব পশ্চিমা বেনিয়া ওষুধ কোম্পানি ঠিকই এ দেশের লতা-পাতা, কান্ড, মূল থেকে মূল্যবান ওষুধ তৈরী করে প্রচুর মুনাফা লুটেছে। যেমন সর্পগন্ধা থেকে সিবা তৈরী করেছিল উচ্চরক্তচাপ নিরোধক, সেডেটিভ ওষুধ- ‘সারপাসিল’-এক সময় দেদার বিক্রি হয়েছে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের দাক্ষিণ্যে।

যাদের এসব লোকওষুধে আগ্রহ আছে তারা জানেন এ দেশে শহরে-গ্রামে ঝোপে-জঙ্গলে লতিয়ে ওঠা তেলাকুচা পাতার রস মানবদেহে রক্তশর্করা কমাতে কার্যকর ওষুধ। ডায়াবেটিসে রক্তশর্করা কমাতে কার্যকর লতাপাতা জাতীয় ভেষজ এ দেশে অনেক। তবে গুরুত্বপূর্ণ ভাইরাল হেপাটাইটিসের (যকৃত প্রদাহের) বিরুদ্ধে কার্যকর শাদামাটা অড়হর গাছের পাতার রস সাধারণ মানুষ হরহামেশা ভাইরাল জন্ডিসে ব্যবহার করে থাকে। এমন একটি সুলভ মূল্যবান ঔষধী নিয়েও আমাদের সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানের কোনো গবেষকের আগ্রহ দেখা যায়নি। কেন? এমন মুনাফা-স্ফীক স্থানীয় ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তাদেরও একটি আবিষ্কারের দিকে নজর পড়েনি। প্রাচীন শাস্ত্রে এমন অনেক কার্যকর ঔষধীর নাম মিলবে। আসলে আমাদের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনী প্রবণতার বড় অভাব। অনাসক্তি গবেষণাকর্মে, শ্রম ও সময় ব্যবহারে। পাটের জেনোম আবিষ্কার বা অনুরূপ দু’-চার জন হয়ত ব্যতিক্রম।

দুই.

দুঃখজনক যে, আমাদের মেধা দেশজ সম্পদ থেকে মূল্যবান উদ্ভাবনে উদাসীন। যাই হোক, এবার সূচনা প্রসঙ্গে ফিরে যাই। ডা. জার্ভিসের বইটিতে লোক চিকিৎসা বিষয়ক বেশ কিছু উপকরণের উল্লেখ রয়েছে। যেগুলোর কার্যকারিতা আমাদের মেধাবী চিকিৎসা-বিদ্যা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। কারণ, সুলভ, স্বল্পমূল্যের ওষুধ দেশের নিম্নবর্গীয় মানুষের চিকিৎসা-চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ডা. জার্ভিস ‘ফোক মেডিসিন’ তথা লোক চিকিৎসা বলতে ‘প্রাকৃতিক চিকিৎসা’ বোঝাতে চেয়েছেন। তার তত্ত্বগত বিচারে আমাদের আদি পূর্বপুরুষ প্রাচীন প্রকৃতির সঙ্গে থেকে প্রকৃতির বিরূপতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আবার প্রকৃতির আশীর্বাদী উপাদানের ওপর নির্ভর করেই অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করেছে।

আধুনিক মানুষ সেসব প্রাকৃত উপকরণের সহজলভ্য চিকিৎসার সহায়তা নিতে পারে, যা প্রকৃতিগতভাবে তার দেহ ব্যবস্থার অনুকূল।

তার বিবেচনায় আমরা প্রাণীজগতের আচরণ থেকে আমাদের স্বাস্থ্যরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধের অনেক বিধিবিধান জানতে পারি মনোযোগী পর্যবেক্ষণে। তার বিচারে প্রাণীকুলের জৈবনিক হিসাব-নিকাশ অনুযায়ী মানুষের জীবন সময়কাল তথা আয়ু ন্যূনপক্ষে শতবর্ষ হওয়া উচিত। আর সেটা প্রাকৃত পরিবেশের জীবনযাপনে সম্ভব। সম্ভব শতবর্ষীর সুস্থ-সক্রিয় জীবনযাপন।

অবাক হয়েছি একই রকম তথ্য আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার বরাতে জেনে যে, মানুষের সুস্থ জীবনযাপনের সময়-সীমা ১০০ থেকে ১২০ বছর পর্যন্ত প্রলম্বিত হতে পারে। অবশ্য এখানেও একই শর্ত- তা প্রকৃতির নিবিড় সাহচর্যে বসবাস। কৃত্রিম নাগরিক জীবনযাপনের নানা চাপ তাপে তা বিঘিœত হয়। আমরা স্মরণ করতে পারি, রবীন্দ্রনাথ তার ‘ছিহ্নপত্রাবলী’ থেকে একাধিক লেখায় প্রাকৃত সৌন্দর্যের পরিবেশে জীবনযাপনের আকাঙ্খা প্রকাশ করেছেন। কথাটা সত্য, কৃত্রিম খাদ্য উপকরণ, কৃত্রিম দূষিত পরিবেশ দীর্ঘায়ুর অনুকূল নয়।

ডা. জার্ভিসের পর্যবেক্ষণ এবং আধুনিক বিজ্ঞানের কিছু কিছু গবেষণাজাত সিদ্ধান্ত বাস্তবতার নিরিখে সত্য হয়ে দাঁড়ায়। আমরা জানি যে, মস্তিষ্ককোষের সতেজ সক্রিয়তায় তারুণ্যে ও বয়সীর ক্ষেত্রে খুব একটা ভিন্ন নয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে তার পরিপূর্ণতার দিকে যাত্রা অধিকতর। যেমন- ডা. জার্ভিসের বিচারে মানুষ তার সর্বোত্তম সম্পন্ন করতে পারে ৬০ থেকে ৮০ বছর বয়ক্রমের মধ্যে।

আর আধুনিক বিজ্ঞান গবেষক একই ধারণার বশবর্তী হয়ে বিশ্বের বরেণ্য কবি-লেখক-শিল্পীর উদাহরণ টেনে আনতে পারেন যেক্ষেত্রে তুলনায় বার্ধক্যেও সৃষ্টিকর্মে প্রতিভার চরম প্রকাশ ঘটেছে। প্রাচীন সাহিত্যের দু’চারটে উদাহরণ তেমন প্রমাণই তুলে ধরে। মস্তিষ্ককোষের ব্যাপক অবক্ষয় ঘটলে তো এমনটা সম্ভব হতে পারে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্বেষা, এ ধাঁধার জবাব পাওয়া যায় না।

আমরা তাই কিছুটা হতবাক হই হোমারের ইলিয়ডে বর্ণিত বৃদ্ধ নোস্টার কাহিনী পড়ে। কিংবা এমন তথ্য জেনে যে, নাট্যকার সফোক্লিস ৯০ বছর, আইসোক্রেটিস ৯৮ বছর, ক্যাসিওডোরাস ৯৫ বছর, চিত্রশিল্পী টিশিয়ান ৯৯ বছরের দীর্ঘ জীবনের শেষ অধ্যায়েও অসাধারণ সৃজনশীল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। উদাহরণ না বাড়িয়ে শুধু ভাবতে হয় জীববিজ্ঞানের রহস্য ভেদের ক্ষেত্রটি এখনো আমাদের জন্য অতল মহাসাগরই রয়ে গেল, কিংবা হয়তো অন্তহীন মহাকাশ।

তিন.

চিকিৎসাবিজ্ঞানী জার্ভিসের লোক চিকিৎসা ব্যবস্থার মূল কথা হল যতটা সম্ভব প্রকৃতির সঙ্গে থাকা এবং জীবনযাপনে প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলা। সে কাজটি সঠিকভাবে করতে পারলে শতবর্ষীর জীবনযাপন খুবই সহজ ব্যাপার।

এক্ষেত্রে তিনি খাদ্যেও প্রকৃতির ওপর জোর দিয়েছেন। অর্থাৎ আমাদের খাদ্যের প্রধান অংশ হতে হবে প্রাকৃত চরিত্রের, যা মূলত উদ্ভিদ জগত থেকে আহরিত। শ্বেতসার খাদ্যের পাশাপাশি কয়েকটি বিশেষ খাদ্য তার বিবেচনায় স্বাস্থ্যরক্ষার খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হল মধু, আঙুর, ও আপেল, বিশেষ করে তাজা আপেল থেকে তৈরী আপেল-সিডার ভিনিগার এবং তা মাত্র দু’-এক চা চামচ করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন খাওয়া।

আঙুরের রসে শর্করার সঙ্গে রয়েছে টারটারিক এ্যাসিড আর আপেল রসে ম্যালিক এ্যাসিড। তাহলে এ দেশের মানুষের সস্তা ও সুলভ তেঁতুল দিয়েই তো টারটারিক এ্যাসিডের চাহিদা পূরণ করতে পারেন। যেমন কাঁচা তেঁতুলের ঝোল, তেমনি পাকা তেঁতুলের শরবত।

এ দেশের প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্র তেঁতুলের এত গুণগান না করলেও পন্ডিত-দার্শনিক বুনো রামনাথ নাকি তেঁতুল পাতা ও মৌরলা মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়েই দীর্ঘ জীবনযাপন করেছেন এবং তাত্ত্বিক তর্কবিদ হিসেবে সুনামও অর্জন করেন। বনে বাস করার জন্য এই পন্ডিত মানুষটি বুনো রামনাথ হিসেবেই পরিচিত হন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাকে অর্থ ও ভূসম্পদ দান করতে চাইলে তার বিনীত প্রত্যাখ্যান এই বলে যে তার কুঁড়েঘরের ওপর ছায়া ফেলা বিশাল ‘তিন্তিড়ী’ (তেঁতুল) বৃক্ষের পাতা এবং জলাশয়ের ছোটমাছেই তার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়- এর বেশী কিছুতে তার আগ্রহ নেই। পুরনো দিন ফিরিয়ে আনার তো প্রশ্ন ওঠে না। আসল কথা হল পুরনো ঝুলি থেকে যা কিছু ভাল, যা কিছু জীবনযাপনের জন্য উপকারী তার যথাযথ ব্যবহার, এক কথায় ঐতিহ্যের সময়-উপযোগী ধারণ। ওই লোক বিধান মতে পঞ্চাশোর্ধ বয়সে মানুষের জীবনযাত্রার লক্ষ্য হওয়া উচিত জিভের স্বাদ মেটাতে যা কিছু বা যেমন-তেমন খাওয়া নয় (যা আযৌবন চলছে) বরং দরকার দেহযন্ত্রকে নতুন করে গড়ে তুলতে নির্বাচিত খাদ্য-উপাদান গ্রহণ এবং তা পরিমিত মাত্রায়। যৌবনের অপরিমিমাত্রাকে সংযমের ও নিয়মের বাঁধনে বাঁধতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্যে যেন সে নীতির প্রতিফল ঘটে। তাই খাদ্য উপাদানের বিষয়ে সাধারণ নিয়মের মধ্যেই বিশেষ কিছু নিয়ম হল, গমের বদলে ভুট্টা, যব বা রাই প্রধান খাদ্য হিসেবে বেছে নিতে পারলে ভাল।

তেমনি দুধের বদলে দই ও সামান্য পনির। গরু-খাসির মাংসের বদলে মধু এবং পর্যাপ্ত শাক-সবজির সঙ্গে একটি করে ডিম। আর গ্রহণযোগ্য মাত্রায় সালাদ। তবে এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে রসাল ফলের ওপর, যা প্রতিদিন আহার্যে থাকতেই হবে, সেই সঙ্গে বীচি ও বাদাম জাতীয় উপাদান কিছু পরিমাণে। রসাল ফল প্রসঙ্গে আমাদের কথা হল, যে দেশে যেমন ফল জন্মে তাই খাওয়া, তেমনই খাওয়া। এটা প্রকৃতিরই নিয়ম।

আর যেহেতু দেহকোষের প্রধান উপাদান পানি, তাই ওই পরিবেশ রক্ষা করতে দরকার হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। তবে তাদের হিসাব মতে, তা যেন ক্ষারত্বের আধিক্য না ঘটায়। অন্যদিকে খাদ্য উপকরণ থেকে শরীর যেন যথেষ্ট মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজপদার্থ গ্রহণ করতে পারে দেহ গঠনে বা দেহ সংরক্ষণের জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ।

এবার এইসব পরামর্শের সঙ্গে আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের বক্তব্য মিলিয়ে দেখুন তো মিল-অমিল কতটা। আমার ধারণা মিলের দিকটাই বেশী হবে। ক্ষেত্র বিশেষে হয়ত বিকল্প চিন্তার অবকাশ থাকবে। কিন্তু মূলনীতিতে বড় একটা ভিন্নতা দেখা যাবে না। শহুরে জীবনটাতে কিছুটা গ্রামীণ গাছপালার ছায়া ফেলতে দিতে হবে, সেই সঙ্গে খোলা হাওয়া যার কোনো বিকল্প নেই।

দখিনা-৩৮

আহমদ রফিক : ভাষাসংগ্রামী, চিকিৎসক ও প্রাবন্ধিক।